পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ ইসলামপুর চাহিদার তুলনায় জোগান কম। তাই উত্তর দিনাজপুর জেলায় উৎপাদিত সুগন্ধী ও সরু তুলাইপাঞ্জি চালের চাহিদা বরাবরই বেশি। স্বভাবতই বাজারে এর কদর বরাবরই বেশি।
যদিও তুলাইপাঞ্জি এতদিন শুধুই রায়গঞ্জের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অবশেষে গোটা জেলা জুড়ে এই ধান চাষ বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করলে জেলা কৃষি দফতর। আর সেজন্য চাষিদের উৎসাহিত করার জন্য জেলায় চাষিদের বিনামূল্যে তুলাইপাঞ্জি ধানের বীজ বিতরণ শুরু হয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে এই ধানবিলির কাজ চলছে জেলার বিভিন্ন ব্লকে ব্লকে।
প্রসঙ্গত– এই চাষ মূলত রায়গঞ্জ– হেমতাবাদ– কালিয়াগঞ্জ এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমুন্ডি এলাকায় চাষ হয়। এছাড়াও ইসলামপুর মহকুমার করণদিঘির কিছু এলাকায় চাষ হয়। তুলাইপাঞ্জি চাষ বাড়ানোর জন্য এই প্রথম গোয়ালপোখর ইসলামপুর এবং চাকুলিয়া এলাকায় চাষিদের বিনামূল্যে তুলাইপাঞ্জি ধানবীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই বিলি শুরু হলেও বেশকিছু ব্লকে ঢিমেতালে ধান বীজ বিলি করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চাষিরা। কৃষি দফতর সূত্রে খবর– প্রতি বছর জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে– আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে তুলাইপাঞ্জি ধানের বীজ রোপন করা হয়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সেই ধান ওঠে। জেলার সাতহাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়। প্রতিবছর জেলার রায়গঞ্জ– কালিয়াগঞ্জ –ইটাহার– হেমতাবাদ ও করণদিঘি ব্লকের প্রায় এক লক্ষ পাঁচ হাজার কুইন্টাল তুলাইপাঞ্জি ধান উৎপাদন হয়।
জেলা কৃষি অধিকর্তা বিপ্লব ঘোষের দাবি– জেলার কয়েকটি ব্লকের একাংশের মাটি ও আবহাওয়া তুলাইপাঞ্জি ধান চাষের ক্ষেত্রে অনুকূল। জেলায় তুলাইপাঞ্জি চালের যা চাহিদা– তা থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ কম তুলাইপাঞ্জি ধানের চাষ হয়। দিনের দিন তুলাইপাঞ্জি চালের ভিনরাজ্য তো বটে এমনকি বিদেশেও চাহিদা বাড়ছে। স্থানীয় বাজারে যথেষ্ট চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চাষ বাড়ানোর লক্ষ্যে বিনামূল্যে এই ধান বীজ চারা দেওয়া কৃষকদের। জেলার চাকুলিয়া ইসলামপুর এবং গোয়ালপোখর এলাকায় এই প্রথম তুলাইপাঞ্জি ধান চারা বীজ দেওয়া হল। এই এলাকায় আবহাওয়া মাটি অনুকূলে না থাকলে সেই বিষয়ে কৃষিবিজ্ঞানীরা সাহায্য করবেন। কৃষি দফতর সূত্রের খবর– জেলায় দুহাজার হেক্টর জমির জন্য তুলাইপাঞ্জি ধান চারা বিলি করা হচ্ছে। হেক্টর প্রতি ৫০ কেজি ধান বীজ চারা লাগে। চার কেজি– আট কেজি প্যাকেট করা হয়েছে। এই ধান বীজ বিতরণ করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার পঞ্চায়েত সমিতি সাহায্য। চাষিদের চালের সুগন্ধ ও গুনগত মান ধরে রাখতে কৃষি আধিকারিক এবং প্রযুক্তি সহায়ককরা জেলা জুড়ে চাষিদের জৈব সার প্রয়োগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে ড্রাম সিডার পদ্ধতিতে তুলাইপাঞ্জি ধানের বীজ ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রুখে অঙ্কুর তৈরি করে তা সরাসরি জমিতে রোপন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে কৃষি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
অতীতে রাসায়নিক সার প্রয়োগের জেরে তুলাইপঞ্জি ধানের ফলন কমে যাওয়ার পাশাপাশি চালের গন্ধ ও গুনগত মানও কমে যাবে। সেই বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে বীজ বিলির সময়। বীজ পেয়ে খুশি গোয়ালপোখর চাকুলিয়া এবং করণদিঘি এলাকার চাষিরা। এতদিন তুলাইপাঞ্জি চালের নাম শুনেছেন। কোনদিন সেই চালের স্বাদ পাননি। তেমনি এবার সেই ধান চাষ করার সুযোগ পেয়ে গেলেন বলে জানালেন ইসলামপুরে কৃষক তনবির আলম। তিনি জানালেন– বীজ হাতে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।