পারিজাত মোল্লা: কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসের মামলা গুলির দিকে নজর থাকে অনেকেই। বিশেষত শাসক দলের নজর ছিল একটু বেশি। বেশিরভাগ মামলায় রাজ্যের বিরুদ্ধে নির্দেশ যেত। এবার সেই বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ থেকে সরলো পুলিশ সংক্রান্ত মামলার শুনানি । কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের তরফে এক বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে।
এবার সেই মামলা সরল বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে। আগামী ৪ জুলাই থেকে পুলিশের সমস্ত মামলার শুনানি হবে বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে। কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের তরফে এক বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে। সিঙ্গেল বেঞ্চের পরিবর্তে এখন থেকে দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দায়িত্ব পেলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার । রস্টারে বদল এনে জানাল কলকাতা হাইকোর্ট।
সাম্প্রতিক সময়ে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে মামলার শুনানি নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে মামলার রায় দেন অভিযোগ তুলে বিচারপতির বেঞ্চ বয়কট করেছিলেন তৃণমূল পক্ষের আইনজীবীরা। বিচারপতি মান্থার বেঞ্চে দীর্ঘদিন সরকারি পক্ষের কোনও আইনজীবী মামলার শুনানিতে হাজির থাকতেন না। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্ট ও বিচারপতি মান্থারের যোধপুর পার্কের বাড়ির দেওয়ালে বিচারপতির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে পোস্টারও পড়েছিল। সেই নিয়ে ইতিমধ্যে হাইকোর্টে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে বিষয়টির শুনানি চলছে।পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিস্থিতিতে রাজ্যে পুলিশের ভূমিকা বার বার বিচারপতি মান্থারের বেঞ্চে প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
পুলিশের ভূমিকায় কোনওরকম পক্ষপাতিত্বের আচরণ দেখতে পেলেই কড়া সমালোচনা ও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মান্থার। বিশেষত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীরা যাতে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন, তার জন্য পুলিশকে এসকর্ট করে তাঁদের মনোনয়ন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের পুলিশ যাতে হেনস্থা না-করে, তার জন্য একাধিক ক্ষেত্রে সুরক্ষা কবচও দিয়েছেন।বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে ওই মামলাগুলির শুনানি হত। এর পর থেকে ওই মামলাগুলির শুনানি হবে বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে।
আগামী ৪ জুলাই থেকে কলকাতা হাইকোর্টে নতুন ‘রস্টার’ অনুযায়ী নতুন বেঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিষয়ের মামলার শুনানি হবে।এর আগে পুলিশ, সিবিআই এবং ইডি সংক্রান্ত মামলাগুলির বিচার করতেন বিচারপতি মান্থার। এখন পদোন্নতি হওয়ায় তিনি ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছেন। তাই হাইকোর্টের ‘মাস্টার অফ রস্টার’ প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম তাঁর বিচারের বিষয়গুলি বিচারপতি সেনগুপ্তের এজলাসে পাঠিয়েছেন। আগামী জুলাই মাস থেকে সেখানেই ওই মামলাগুলির বিচার হবে। আর বিচারপতি মান্থার নেতৃত্বে বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের বিচার্য বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে বৈবাহিক বিষয়ক, অত্যাবশ্যক পণ্য, বিদ্যুত্, পরিবহণ, টেলি যোগাযোগ সংক্রান্ত মামলাগুলি।
পুলিশের মামলায় একাধিক উল্লেখযোগ্য রায় রয়েছে বিচারপতি মান্থারের। আইনশৃঙ্খলার কাজে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যবহার করা যাবে না— এ নির্দেশ ছিল তাঁরই। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে ওই বিষয়টিকে হাতিয়ার করেছে বিরোধীরা। বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কট এবং তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার লাগানোর ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে পুলিশ সংক্রান্ত মামলায় বরাবর আলোচনায় ছিলেন তিনি।চলতি মাসে বিচারপতি পদ থেকে অবসর নিচ্ছেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার।
এত দিন তাঁর নেতৃত্বে ডিভিশন বেঞ্চে শিক্ষা সংক্রান্ত মামলাগুলির শুনানি হত। বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের অনেক নির্দেশ তাঁর ডিভিশন বেঞ্চেও বহাল থাকে। সম্প্রতি ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশও কিছুটা বদল করে একই রেখেছিল বিচারপতি তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ। তাঁর অবসরের পর শিক্ষার মামলাগুলি যাচ্ছে বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে। গত বছর শিক্ষায় দুর্নীতি সংক্রান্ত এক মামলায় বিচারপতি সেন মন্তব্য করেছিলেন, ”প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হচ্ছে এই দুর্নীতি হিমশৈলের চূড়ামাত্র। তদন্ত যত এগিয়ে যাবে, তত দুর্নীতি প্রকাশ পাবে।”বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট যে রস্টার প্রকাশ করেছে তাতেই এ কথা জানানো হয়েছে।