পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক:কখনও মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব তো কখনও মহিশূরের স্বাধীন শাসক টিপু সুলতান। দেশের একটি শক্তিশালী উগ্রবাদী মহলের দৈনন্দিন কাজই হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদেরকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যু হয়েছে ১৭০৭ সালে। অপরদিকে টিপু সুলতান মারা যান ১৭৯৯ সালে। অর্থাৎ, মাঝে পার হয়ে গেছে ২০০-৩০০ বছরের বেশি সময়। এসেছে ব্রিটিশ শাসন। তাদের কাছ থেকেও মুক্তি লাভ করেছে ভারত। কিন্তু একশ্রেণির মানুষ আটকে আছে সেই অষ্টাদশ শতকেই। পড়ে আছে টিপু সুলতান, না হয় আওরঙ্গজেবকে নিয়ে।
তাদেরকে নিয়ে সামান্য হোয়াটস অ্যাপ স্টেটাস দেওয়ায় দিনকয়েক আগে মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। মুসলিমদের দোকানপাট ভেঙে চুরমার করে দেয় দুষ্কৃতীরা।
২০২৩ সালের এই দুষ্কৃতীদের ঠিক কী ক্ষতি করেছে টিপু-আওরঙ্গজেবরা, সেটা স্পষ্ট নয়। অথচ যত রাগ ওদেরই উপর। কিন্তু তারা তো কবেই ইন্তেকাল করেছেন। তাই তাদেরই ‘জাতভাই’দেরকে নাকি নিশানায় পরিণত করা হচ্ছে।
এবার মহারাষ্ট্রে ফের টিপু বিতর্ক শুরু হয়েছে। তাঁর স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছিল ধুলে শহরের বাইপাস সংলগ্ন এলাকায়। এর আগের শিবসেনা-এনসিপি সরকারের আমলে সেখানকার চৌরাস্তায় টিপু সুলতানের নামাঙ্কিত একটি স্মারক নির্মাণ করেন স্থানীয় মিম-বিধায়ক ফারুক আনোয়ার শাহ।
সবকিছু ভালোই চলছিল। সুন্দর স্মৃতিসৌধটির প্রশংসাও করেছিলেন বহু মানুষ। কিন্তু এখন শিণ্ডে-ফড়নবিস সরকার ক্ষমতায়। ফলে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর দাপট বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ। আর এখন তো যেখানেই ডাবল ইঞ্জিন সরকার, সেখানেই বুলডোজার!
অতএব, দিনকয়েক আগে বুলডোজার গিয়ে হাজির হয় রাতের অন্ধকারে। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় টিপু সুলতানের স্মৃতিসৌধ। দাবি, এই বুলডোজার দিয়ে ভাঙার কাজটি করেছে পুরসভার লোকেরাই। স্থানীয় এসপি সঞ্জয় বারকুন্ড জানাচ্ছেন, বেআইনি ভাবে অনুমতি ছাড়াই স্মারকটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তাই ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এতদিন কেন ভাঙা হয়নি? যখন কোলাপুরে হিংসার ঘটনা ঘটল, ঠিক তখনই কেন ধুলের টিপু-স্মারক ভাঙার পদক্ষেপ নিতে হল? এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য প্রশাসনের কাছে নেই। তারা আপাতত স্মারক ভেঙে ফেলা স্থানটি পরিষ্কারে ব্যস্ত।