সুবিদ আবদুল্লাহ: ‘মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীতে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার অগ্রগতি হয়েছে। অথচ মাদ্রাসা সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয় ইবনে সিনাকে। তিনি পড়েছিলেন মাদ্রাসায়। তেমনি ইবনে রুশদ, ইবনে খলদুনের মতো বিজ্ঞানীরা ছিলেন মাদ্রাসার ছাত্র।’ মুসলিম স্পেন এবং বাগদাদে মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যে পরিপুষ্ট হয়েছিল তা ইউরোপ আমেরিকা-সহ সকল দেশের বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদরা স্বীকার করেন। হাওড়ার খাজনাবাহালা হাই মাদ্রাসার শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান মঞ্চে কথাগুলি বলেন, রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ ও বর্তমান মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান।
হাওড়ার শ্যামপুর থানার প্রত্যন্ত এলাকা খাজনাবাহালা গ্রামে এসে তিনি মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে আলাপ করেন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। ইমরান সাহেব মঞ্চে উঠে প্রথমে বলেন, একটি মাদ্রাসার ১০০ বছর পার করা এবং তাকে চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন। তার জন্য মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সম্পাদক এবং পরিচালন কমিটির সদস্যদের তিনি ধন্যবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে ৭৫ শতাংশই ছাত্রী। এই পার্থক্য কেন, তা ভেবে দেখতে বলব। দোয়া করি, আগামীতে ছাত্রীরা যেন একেকজন রোকেয়া সাখাওয়াত হয়ে ওঠে। আমি দেখলাম, এই মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাহিত্য সংস্কৃতির চেতনা রয়েছে।
পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই প্রতিষ্ঠান থেকে তোমরা এমন রেজাল্ট করবে যাতে মাদ্রাসা তোমাদের নিয়ে গর্ববোধ করে। আমাদের দ্বীন ও দুনিয়ার দুই শিক্ষাই অর্জন করতে হবে। আমাদের বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ যেমন জানতে হবে তেমনি বেগম রোকেয়া, একে ফজলুল হক, মওলানা আকরাম খাঁ’কেও জানতে হবে।
তিনি বলেন, আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, শতবর্ষের এই মাদ্রাসার বাংলার প্রধানমন্ত্রী শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকও এসেছিলেন। তিনি এই মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক মণিরুল ইসলামের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, তাঁর সাহিত্য ও ঐতিহ্য চেতনা এই মাদ্রাসাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই মাদ্রাসার শতবর্ষ স্মারক গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে তার মান, ইতিহাস চেতনারও তিনি প্রশংসা করেন।
মঞ্চে এ দিনের উপস্থিতি কার্যত চাঁদের হাটের রূপ নেয়। ছিলেন অধ্যাপক ইমানুল হক, অধ্যাপক সুরঞ্জন মিদ্দে, সাহিত্যিক ইসমাইল দরবেশ, মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমির সম্পাদক মুহম্মদ ফারুক, চিত্রকর রণজিৎ রাউত, অধ্যাপক মধুবন্তী সোম, নতুন গতি-র সম্পাদক এমদাদুল হক নূর, আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক কল্যাণ দাস, অধ্যাপক সুদীপ্ত মাজি, প্রাবন্ধিক আবু রাইহান, অধ্যাপক মোস্তাক আমেদ, বিজ্ঞান গবেষক কল্লোল ভট্টাচার্য প্রমুখ। প্রত্যেক অতিথিকে বরণ করার আগে তাঁদের সঙ্গে উপস্থিত দর্শকের পরিচয় করিয়ে দেন মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক মণিরুল ইসলাম।
তিনদিনের শতবর্ষ উদ্যাপনের সমাপ্তি ছিল এ দিন। সকালে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বিকেলে ছিল ‘ভারতীয় জনজীবনে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য সাধনা’ বিষয়ে মনোজ্ঞ আলোচনাসভা। সভায় অংশ নেন উপস্থিত অতিথিরা। সংগীত পরিবেশন করেন মধুবন্তী সোম। সন্ধ্যার পর ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে শতবর্ষ উদ্যাপনের সমাপ্তি হয়।