পুবের কলম প্রতিবেদক: কলকাতার মোমিনপুর এলাকায় ধর্মীয় একটি অনুষ্ঠানের পতাকা খুলে ফেলা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ছোট ঝামেলা হয়। এ নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে। অন্যদিকে, পুলিশ কড়া হাতে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছে। একবালপুর থানা এলাকায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। এলাকা শান্ত রয়েছে। শুধু কী তাই? না, একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা ঝামেলা বাঁধানোর চেষ্টা করলেও স্থানীয় মানুষজন কিন্তু সব অপচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন।
মোমিনপুর এলাকাতে চাপান-উতোর থাকলেও মানুষ শান্তির পক্ষে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একবালপুরে ‘বিরাট দাঙ্গা’ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বাংলার রাজ্যপালের কাছে সেই রাত্রিতেই চিঠি পাঠিয়েছেন বলে খবর।
বিজেপি দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তবে মোমিনপুর, একবালপুর, ভূকৈলাস রোডে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে শান্তি ও সম্প্রীতিরই বার্তা।
ভূকৈলাস রোডের মোড়ের মাথায় রয়েছে ‘ভূকৈলাস হিন্দুস্তান নবযুবক সংঘ’। তারা ৬১ বছর ধরে এখানে দুর্গাপুজোর আয়োজন করছে। দুর্গাপুজো সদ্য মিটেছে, শেষ হয়েছে লক্ষ্মীপুজোও মঙ্গলবার দেখা গেল মণ্ডপ খোলার কাজ চলছে। কথা হচ্ছিল স্থানীয়দের সঙ্গে।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, পুজো দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন মণ্ডপ চত্বরে। হিন্দু-মুসলিম মিলিয়ে সব ধর্মের মানুষই পুজো দেখতে আসেন। বলতে গেলে সর্বজনীন চেহারা নেয় এখানকার পুজো। অন্যান্য বারের মতো এবারও জাঁকজমকভাবে হয়েছিল দুর্গাপুজো। কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি। পুজোতে যেমন অশান্তির আঁচ পড়ে না, তেমনি মুসলিম ও খ্রিস্টানদের উৎসবেও সম্প্রীতির ছবি ফুটে ওঠে মোমিনপুর এলাকায়।
এ কথা শুধু হিন্দুরাই বলছেন না। একই কথা বলছেন সংখ্যালঘু সমাজের লোকজনও। পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ভালো বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। মিলাদ-উন-নবীর সুবিশাল গেট আর দুর্গাপুজোর মণ্ডপ, একেবারে মুখোমুখি। এখনও পুজোর হোর্ডিং টাঙানো রয়েছে। সেখানে এতটুকু আঁচড় কাটেনি কেউ। যাবতীয় ভেদাভেদকে সরিয়ে রেখে স্থানীয় যুবকরা একসঙ্গেই বসে গল্প করছিলেন এ দিনও।
স্থানীয়রা বলছেন, কিছু মানুষের হঠকারি কাজকর্ম এলাকা সম্পর্কে ভুল বার্তা দিচ্ছে। মোমিনপুর এলাকায় অশান্তির যে অভিযোগ উঠেছিল, সেই ঘটনার কথা ভুলতে চান স্থানীয় বাসিন্দারা। পুজো কমিটির প্রেসিডেন্ট জয়ন্ত রায় বলেন, ৬১ বছরে পা দিল এখানকার পুজো। কোথাও কোনও সমস্যা নেই। আমরা সবাই একসঙ্গে থাকি। কোনওদিন কোনও সমস্যা হয়নি। সম্প্রীতি বজায় আছে এলাকায়। এলাকার বাসিন্দা ও চিকিৎসক মাহমুদও বলেন, আমরা যাবতীয় চক্রান্ত ও অশান্তির বিরুদ্ধে। বাইরের কেউ যাতে এলাকা নিয়ে গুজব না ছড়ান, তার আবেদনও করেন তিনি।
এ দিকে মোমিনপুরের ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার এ নিয়ে শুনানির আবেদন করেন আইনজীবী সুস্মিতা দত্ত। তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের দাবি করেন। সূত্রের খবর, আজ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে মোমিনপুর নিয়ে মামলার শুনানি হবে।