বিশেষ প্রতিবেদন: মার্কিন নৌবাহিনীর সদস্য ছিলেন রিচার্ড ম্যাককিনি। ইরাক ও আফগানিস্তানে নিযুক্ত থাকাকালীন তাঁর মনে ইসলাম বিদ্বেষ ঠুসে দেওয়া হয়েছিল। অবসরের পর যুদ্ধক্ষেত্রে না থাকলেও মানসিকভাবে সবসময় নিজেকে যোদ্ধা বলে মনে করতেন তিনি। আর ইসলাম নিয়ে ছিল তার অজস্র ভুল ধারণা। তার মনোজগতের যুদ্ধক্ষেত্রের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল ইসলাম। সামরিক বাহিনীতে কাজ করার সময়, ম্যাককিনির কাছে হত্যা করা ছিল সহজ বিষয় এবং তিনি প্রতিটি হত্যা করার পর তার হিসেব রাখতে বিন্দুর মতো ট্যাটু নিজের বুকে আঁকতেন।
তিনি জানান, এমন অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন যা তিনি কারও সঙ্গে কখনও আলোচনা করেননি। তিনি বলেন, ‘আমি ইসলামকে ঘৃণা করতাম না, কিন্তু কিছু কারণে আমার অনুভূতি এমন হয়ে যায়।’ মেরিন বাহিনী থেকে অবসরের পর আমেরিকার ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের মুন্সি শহরে ফেরেন রিচার্ড। এরপর নিজের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে লিপ্ত হন। তিনি মদ পান শুরু করেন এবং মুসলিমদের প্রতি তার মনে ভয়াবহ বিদ্বেষ জন্ম নেয়।
তিনি বলেন, তার ঘৃণা এতই অধিক ছিল যে, তিনি সকল মুসলিমের মৃত্যু কামনা করতেন। তিনি বলেন, ‘আমি মসজিদ উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম, আমার দেশের ভালোর জন্যই এটি আমি চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল।’ ম্যাককিনি তার এলাকার মসজিদটি উড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিজে নিজে বোমা তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন, এতে অন্তত ২০০ মুসলমান নিহত হবে। এই কাজে তার মৃত্যুদন্ড হতে পারে জেনেও তিনি কোনও পরোয়া করেননি। কিন্তু মুসলিমদের প্রতি ম্যাককিনির এই তীব্র বিদ্বেষ একদিন প্রশমিত হয়।
সেদিন তিনি তার কন্যাশিশুর সামনে মুসলিমদের গালমন্দ করছিলেন। তিনি জানান, তার এমন আচরণে তার কন্যা হতবাক হয়ে যায়। ম্যাককিনি বলেন, ‘শিশুরা কুসংস্কার, ঘৃণা ও বর্ণবাদ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। কিন্তু পিতা-মাতা যখন এমন ধারণা পোষণ করে, তখন সন্তানরাও নিজেদের একই চিন্তার আদলে গড়ে তোলে যেভাবে আমরা চিন্তা করি। তাই আমি চিন্তা করলাম আমি আমার ঘৃণাকে মোকাবিলার একটি পথ খুঁজে নিই।’ একসময় এই ম্যাককিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদের বলতেন, ‘ইসলাম হল ক্যানসার। আর আমি হলাম চিকিৎসক যে সেই ক্যানসার ঠিক করবে।’
এমন একজন মুসলিম বিদ্বেষী হয়েও ঠিক কীভাবে ইসলামের ছায়াতলে চলে এলেন ম্যাককিনি? জানা যায়, ২০০৯ সালে মুন্সির ইসলামিক সেন্টারটি বোমা মেরে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন তিনি। তবে তার আগে ইসলাম সম্পর্কে তার সব ধারণা ঠিক কিনা তা যাচাই করতে শেষবারের মতো মসজিদে প্রবেশ করেন ম্যাককিনি। কিন্তু মসজিদে ঢুকতেই তাঁর চিন্তা বদলে যায়। মসজিদে বন্দুক নিয়ে ঢুকলেও কেউ তাকে মারার জন্য ছুটে আসে না। বরং তার হাত থেকে বন্দুকটি নিয়ে নেন এক মুসল্লি। আর এমনটা কখনই আশা করেননি ম্যাককিনি। তিনি ভেবেছিলেন এটাই হয়তো তার শেষদিন হবে। কিন্তু মসজিদের সেই ঘটনা তার জীবন আমূল বদলে দেয়।
এরপর ধীরে ধীরে মসজিদে যাওয়া শুরু করেন ম্যাককিনি। শুরু করেন কুরআন পাঠ। মনের সব প্রশ্নের উত্তর তিনি পেয়ে যান মসজিদে। তিনি বলেন, ‘এমন কেউই ছিল না যে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার বা ঘৃণাপূর্ণ আচরণ করেছে। মুসলমান হওয়ার আগেই সবাই আমাকে ভাইয়ের মতো গ্রহণ করেছে।’ মসজিদে প্রথম প্রবেশের আট মাস পর ম্যাককিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এবং পরবর্তীতে দুই বছরের জন্য সেই মসজিদের প্রেসিডেন্ট পদেও দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি সকলকে ইসলাম সম্পর্কে জানাতে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রতিরোধ করতে কাজ করছেন।