সাকিল আহমেদ : চোখের নজর কমে গেলে আর কাজল দিয়ে কি হবে ‘বাঙালির জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বহু পুরাতন ঐতিহ্য।’ ঈদ এলে আর পাঁচটা বাঙালির রূপচর্চার সঙ্গে ঈদের রূপচর্চার অনন্য ছিল চোখে সুর্মা পরা। আতর দানির আতর গায়ে মেখে কিংবা কানে গুঁজে সুগন্ধি ছড়ানো। সেই আতরওয়ালা-সুর্মাওয়ালাদের আর খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না। কমতে কমতে গ্রামেগঞ্জে তলানিতে পড়েছে। কলকাতায় অবশ্য জুম্মাবারে কিছু মসজিদের সামনে এই সুর্মাওয়ালা ও আতরওয়ালারা এখনও দাঁড়ান। ঈদের দিনেও রেড রোডসহ অন্যান্য ঈদগাহতে এদের সন্ধান পাওয়া যায়। নামায পড়ার আগে অনেকে চোখে সুর্মা কিংবা আতর লাগিয়ে নেন।
পুরুষ ছুটছে স্পা আর নারী ছুটছে বিউটি পার্লারে। তাই বলে নিশ্চিন্ন হয়ে যাবেন তারা? কোথায় খুঁজি তাদের? খুঁজতে খুঁজতে খোঁজ পেলাম বাষট্টি বছরের এক সুর্মাওয়ালা মঈনুদ্দিন মোল্লাকে। থাকেন ডায়মন্ড হারবারের ষাটমণীষা গ্রামে। পেশায় একসময় ছিলেন মেটিয়াবুরুজ এলাকার দর্জির কাটিং মাষ্টার। পাঁচ মেয়ে তিন ছেলের নিয়ে ঘর ভর্তি সংসার।
আতরের সুর্মার কারবার ছিল। এখন শারীরিক ভাবে পঙ্গু। চোখে ভাল দেখতে পারলেও বাম হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত। সংসার চলে না। আব্বা ছিলেন মসজিদের ইমাম। যৌবনে আব্বার সঙ্গে নিজেই মোয়াজ্জিন হয়ে আজান দিতেন। এখন সারাদিন গৃহবন্দী। মেলেনি পঞ্চায়েতের বার্ধক্য ভাতা। কিন্ত ঈদ এলে তাঁর ডান হাতের তুলির টান সুর্মার সুগন্ধি প্রবীণদের প্রাণিত করে।
সুর্মা বা আতরের ঐতিহ্য কতটা?
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই সুর্মা ব্যবহার করতেন এবং তাঁর অনুরাগী সাহাবাদের বলতেন সুর্মা ব্যবহার করতে। তিনি প্রতি রাতে ডান চোখে তিনবার এবং বাম চোখে তিনবার বা দু’বার ব্যবহার করতে ন। সুর্মার উপকারিতা হল এটা ব্যবহারে চোখ ঠান্ডা থাকে। চোখ থেকে পানি নির্গত হয়ে চোখ জীবাণু মুক্ত করে এবং চোখের চুল গজাতে সাহায্য করে।
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে কাজী নজরুল ইসলাম সুর্মা নিয়ে লিখেছেন কবিতাও গান।’ রঙিন দেখে পাগড়ি পরে মাথে,’সুর্মা আঁকি দিল আঁখির পাতে, গন্ধ-ভরা রুমাল নিল হাতে সহস্রবার দাড়ি দিল ঝাড়া। মমির পুতুল মমির দেশের মেয়ে গানে নজরুল উপমা তৈরি করলেন সুর্মার। লিখলেন, সুর্মা পরা আঁখি হানে আসমানে/জোৎস্না আসে নীল আকাশে তার টানে। ঢেউ তুলে নীল দরিয়ায় দিল দরদী নেচে যায়। সুর্মার এমন কাব্যিক ব্যবহার মন টানে।
সুর্মা জিনিসটা আসলে কি?
বিজ্ঞানের ভাষায় সুর্মা আসলে এন্টিমনি। খনিজ গুণ সম্পন্ন পদার্থ। ধাতব গুঁড়া। লেড সালফাইড বা গ্যালোনা। তবে শরিবে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে শরীরে দস্তার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই সাবধানে ব্যবহার করতে হয়। ডিজিটাল যুগে বদলে যাচ্ছে জীবন। বদলে যাচ্ছে পেশা।