সুবিদ আবদুল্লাহ্ঃ রাস্তার ধারে সাইনবোর্ড। বোর্ডে লেখা সরকারের আইনি চেতাবনী। তাকে উপেক্ষা করেই ইতিহাস ধ্বংসের কাজ চলছে। মালদার গৌড় মহানগরীর সুলতানী সাম্রাজ্যের স্থাপত্য মুছে যাচ্ছে প্রকাশ্যে। মুছে দিচ্ছে চোরাকারবারি অসাধু কিছু মানুষ।
চুরির ঘটনা সত্য হলেও এ ব্যাপারে এলাকার মানুষ নির্বাক। হয়তো ভয়, হয়তো বা রয়েছে প্রচ্ছন্ন মদতও। এমনই বলছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ দাস। তিনি জানান, মূল্যবোধ চুরি গেছে আমাদের। গৌড়ের সুলতানী সাম্রাজ্যের মূল্যবান স্থাপত্য রক্ষায় উদ্যোগ নেই কারও। উদাসীন আমরাও।
মালদার ৩৪ নং জাতীয় সড়কের শুশতানি মোড় থেকে মহদীপুর পর্যন্ত গৌড় মহানগরীর সীমানা। গৌড় নগরীর কিছু অংশ কাঁটাতারের ওপারে, বাংলাদেশে। এ পারের কুড়ি কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পনেরো শতকের সুলতানী স্থাপত্য। নজরদারির অভাবে অবহেলায় পড়ে থাকা সেই সব স্থাপত্য চুরি যাচ্ছে নিত্যদিন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি জানাচ্ছেন, এ সব চলছে প্রশাসনের নজরদারির সামনে। স্থাপত্য ভেঙে চুরি যাওয়া প্রতি হাজার ইট বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকায়। সেই ইটে গড়ে উঠছে ব্যক্তিগত ইমারত। সেই ইটে বাড়ি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।
গৌড়ের বড় সোনা মসজিদ, চমকাই মসজিদ, দাখিল দরওয়াজার প্রাচীর ক্ষত করে ইট চুরি যাচ্ছে রাতের অন্ধকারে, দিনের আলোয়। এ ছাড়া লক্ষণ সেন ও বল্লাল সেনের বসতবাটি ও তার সীমানা প্রাচীর ভেঙেও ইট চুরি হচ্ছে। জানা গিয়েছে, স্থানীয় মানুষ নির্বিকার থাকেন দুষ্ক ভয়ে। কখনও বা পাড়ার মানুষদের চুপ রাখতে তাদের ইট উপহার দেওয়া হয়। দাখিল দারওয়াজার পাশে শ্রাবনী দাস এই ইট দিয়েই নিজের বাড়ি করেছেন। যদিও সেই গাঁথুনির অনেকটাই বর্তমানের ইটের। মালদা জেলা পুরাতত্ত্ব অফিসের কর্তারা স্থানীয় মানুষের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গৌড়ের পুরাতত্ত্ব সংগ্রাহক আকমাল হোসেন জানাচ্ছেন, মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগের মত মালদার গৌড়েও রয়েছে পুরাতত্ত্ব নিদর্শন। যা আরও প্রাচীন। এগুলি সংরক্ষণ করে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করানো যায়। কিন্তু তা হচ্ছে না। নষ্ট হচ্ছে সুলতানী আমলের অমূল্য স্থাপত্য। অবহেলার ফলেই স্থাপত্য চুরি সহজ হয়েছে।