পুবের কলম প্রতিবেদক: বিশ্বভারতীর সব শর্ত মেনেই, পৌষমেলা হচ্ছে পূর্বপল্লীর মাঠে। এর ফলে খুশির হাওয়া বিশ্বভারতীতে। যদিও, বিশ্বভারতী এটাকে “শর্ত ” বলতে নারাজ। বিশ্বভারতীর কর্মসচিব অশোক মাহাতো বলেন, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে কতগুলো বিষয় তুলে ধরে বিবেচনার জন্য বলেছিলাম। কোনও শর্ত দিইনি।
তবে, এবার পৌষমেলা হচ্ছে পূর্ব পল্লীর মাঠে। সেই সঙ্গে উনিশ সালের পৌষমেলার সমস্ত তিক্ততার অবসান ঘটতে চলেছে। কর্মসচিব জানান, বিশ্বভারতী ও প্রশাসন উভয় পক্ষই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। চিঠি টাইপ হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে মহকুমা শাসকের চলে যাবে। বোলপুর মহকুমা শাসক অয়ন নাথ বলেন, আমরা বিশ্বভারতীর চিঠির অপেক্ষায় আছি। চিঠি হাতে পেলেই পৌষমেলার স্থান ঘোষণা হবে। প্রবীণ আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুপ্রিয় ঠাকুর আনন্দ প্রকাশ করেন। সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত। আশা করি পৌষ উৎসবে আশ্রমের স্মৃতি বাসর সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে আশ্রমিক সঙ্ঘ অনুষ্ঠান করতে পারবে। আগের উপাচার্য তো বলেছিলেন, ফেল কড়ি, মাখো তেল।
উল্লেখ্য, উনিশ সালের পৌষমেলায় গ্রীন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশক্রমে তিনদিনের মধ্যে জোর করে মেলা তুলতে যাওয়ার কারণে প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সঞ্জয় বোস সহ জনা পাঁচেক আধিকারিকের বিরুদ্ধে যথাক্রমে এক মহিলার উপর শ্লীলতাহানি, কারো গলার হার ছিনতাই, স্টলের মাল লুঠ সহ বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের হয়। সেই মামলার বিরুদ্ধে কোলকাতা হাইকোর্টে আধিকারিকদের ছুটতে হয়। আদালত সেই সঙ্ক্রান্ত কিছু মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এই নিয়ে বিশ্বভারতী এবং ব্যবসায়ী সমিতি এবং প্রশাসনের বিরোধ বাধে। যার ফল স্বরুপ বিশ্বভারতীতে তারপর মেলা হয় নি। জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। বিকল্প মেলা ডাকবাংলো মাঠে হলেও, ব্যবসায়ীদের খুব ভালো লাভ হয় নি। সাধারণ মানুষের এই প্রয়োজন মুখ্যমন্ত্রী ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাই বিশ্বভারতী তার অপারগতার কথা ঘোষণার করলে, মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে আসেন। তাঁর নির্দেশে জেলা প্রশাসন এই মেলা পূর্বপল্লীর মাঠে করতে চেয়ে বিশ্বভারতীকে চিঠি লেখে।
বিশ্বভারতী কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে। যার মধ্যে ছিল, মেলা তুলতে গেলে মামলায় জড়ানোর ঝামেলা সহ একাধিক বিষয়। সমস্ত বিষয় আন্তরিকতার সঙ্গে প্রশাসন শুনেছে। বিশ্বভারতীর এক আধিকারিক বলেন, পৌষমেলা হোক আমরা চেয়েছিলাম। কিন্তু তাকে ঘিরে সমস্ত তিক্ততার অবসান চেয়েছিলাম। সেটা হতে চলেছে। কারণ কোনো আধিকারিক প্রকাশ্য দিবালোকে গলার হার ছিনতাই করবেন, এটা মানতে আমাদের কষ্ট হয়েছিল। যাহোক, সব মিটে গেছে বা যাবে বলে আশাবাদী।
উল্লেখ্য, উনিশ সালের পর ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা আর হয় নি। মাঝে করোনাজনিত কারণে মেলা করে উঠতে পারে নি। প্রথম থেকে ঐতিহ্যবাহী মেলায় সম্মতি জানিয়ে অবশেষে বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে মেলার মাঠ ব্যবহার করতে দিতে রাজি হয় বিশ্বভারতী। মন্ত্রী চন্দ্র নাথ সিনহা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই, এটা সম্ভব হলো। রাতে আমরা একবার মেলা নিয়ে বসবো।