দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাট: বাপের বাড়ি এসেছিলেন ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে। দুর্ঘটনায় একমাত্র সন্তান হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরলেন মা। ঘটনার জেরে শোকের ছায়া এলাকা জুড়ে। মৃত যুবকের নাম রৌণক সাহা (২২)। বাড়ি সিউড়ি মহকুমার মহম্মদ বাজার থানার কুলকুড়ি গ্রামে। বাবা বাপী সাহা স্থানীয় স্কুলের একজন প্রাথমিক শিক্ষক।
মৃত রৌণকের মামার বাড়ি রামপুরহাট থানার বড়শাল অঞ্চলের গোপালপুর গ্রামে। ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে মা শিল্পা সাহার সঙ্গে মামার বাড়ি আসে রৌণক। মেধাবী রৌণক কলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া। মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক সকলস্তরে খুব ভালো ফল করে সে।
জানা গেছে, কালী পূজা উপলক্ষ্যে গোপালপুরের পাশের গ্রাম উদয়পুরে বড় মেলা বসে। সেই উপলক্ষ্যে মামার বাড়ির বন্ধু শুভাশীষ প্রামাণিক, অরিন্দম সাহা ও রৌণক সাহা শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ একটি বাইকে করে বের হয়। পথের মাঝে সাতঘরিয়া গ্রামের তেরেলা পাড়ার মোড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। ওই সময় বাইকের সামনে একজন ব্যক্তি হঠাৎ চলে আসেন। তাকে বাঁচাতে গিয়ে বাইক মাঠের গর্তে পড়ে যায়। আর তাতেই বুকে তীব্র আঘাত পায় রৌণক। শুভাশীষ প্রামাণিক ও অরিন্দম সাহার হাতে পায়ে আঘাত লেগেছে। শুভাশীষ বলে, বাইক চালাচ্ছিল অরিন্দম, মাঝে ছিল রৌণক এবং শেষে ছিলাম আমি। বাইকের হাতলে রৌণকের বুকে লাগে। তারপর রামপুরহাট হাসপাতালে রৌণককে ভর্তি করা হয়। অবস্থা খারাপ হতে থাকায় বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে যোগাযোগ করা হয় পরিবারের তরফে। কিন্তু নার্সিংহোম পৌঁছনোর আগেই শুক্রবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ রৌণকের মৃত্যু হয়।
প্রতিবারের মতো ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিতে বড় বোন শিল্পা সাহা, পম্মা সাহা শুক্রবার গোপালপুরে বাপের বাড়ি চলে আসেন। ছোট বোন পাপিয়া সাহার শনিবার সকালে আসার কথা ছিল। শুক্রবার রাতেই ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে চলছিল তরকারি কাটাকুটি। ব্যস্ত ভাই কৌশিক সাহা। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল সব। ছেলে লাশ হয়ে ফিরল বাড়ি। শোকে জ্ঞান হারাচ্ছেন মা শিল্পা সাহা।