ইন্তেখাব আলমঃ ডিসেম্বর মাস থেকেই ফুরফুরে মেজাজে ভ্রমণ, বিনোদন আর রসেবসে পিকনিকের আনন্দ উপভোগ করতেই ভালোবাসে আম বাঙালি। শীতের বনভোজনের পাশাপাশি কলকাতার বিভিন্ন পার্ক, চিড়িয়াখানা, মিউজিয়াম আর ময়দানে আড্ডা-আনন্দে মেতে ওঠেন বিভিন্ন বয়েসের মানুষ। বড়দিন থেকে বর্ষবরণ, খাদ্যমেলা থেকে বই পার্বন, রাজ্যবাসীর নিজস্ব সংস্কৃতির অঙ্গ। ‘মাছ-মিষ্টি-মোর’ বাঙালির মাছের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা সেই প্রাচীনকাল থেকেই।
মাছে-ভাতে বাঙালির পাশাপাশি শহরের বাসিন্দাদের ভিন্ন রকমের আনন্দ দেওয়ার জন্য এবার কলকাতায় হাজির ভ্রাম্যমান আণ্ডার ওয়াটার অ্যাকুরিয়াম। বড়দিন এবং বর্ষবরণ উপলক্ষে কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দানে প্রতিবছরই মেলা বসে। কিন্তু,এবারের মেলায় বিশেষ আকর্ষণ ভ্রাম্যমান আণ্ডার ওয়াটার টানেল অ্যাকোরিয়াম।
আর পায়ে হেঁটে স্বচক্ষে এই টানেল অ্যাকোরিয়াম দেখতেই ভিড় জমাচ্ছেন আট থেকে আশি বছরের মাছ প্রিয় দর্শনার্থী। টিকিট কেটে এই অ্যাকোরিয়ামে ঢুকলেই দেখা মিলবে একাধিক প্রজাতির বিভিন্ন সাইজের হাজার-হাজার রঙিন সামুদ্রিক মাছের। প্রায় একশো কুড়ি ফুট লম্বা এবং ১৫ ফুট চওড়া মিনার আকৃতির এই বিশাল আণ্ডার ওয়াটার টানেল অ্যাকোরিয়ামে ঢুকেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠছেন দর্শনার্থীরা।
টানেলে প্রবেশ করলেই মনে হবে, কোনো সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। মাথার উপর সহ দুপাশে আলো ঝলমলে পুরু কাঁচের মধ্যে হালকা নীল জলে খেলা করছে বিভিন সাইজের রঙ-বেরঙের হাজার হাজার মীণের ঝাঁক।
মাছের প্রতি মানুষের অদম্য আকর্ষণ সেই প্রাচীন কাল থেকেই। বিভিন্ন ধর্মীয় কাহিনীর পাশাপাশি মাছ শিকার এবং মাছ পালনের ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের। তবে সখের বসে বাড়িতে মাছ পোষার প্রচলন শুরু হয়েছিল প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে সূমেরিয় সভ্যতার বাসিন্দারাদের হাত ধরেই। বিশেষ করে প্রাচীণ মিশর, মেসোপটেমিয়া তথা প্রাচীন ইরাকের মানুষ বসত ঘরের সৌন্দর্য্য বাড়ানোর জন্য বড় মার্বেল পাথরের পাত্রে মাছ পুষতেন।পরবর্তীকালে রোমান সাম্রাজ্যের অধিবাসীরাও কার্প প্রজাতির বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ পুষে নিজেদের আভিজাত্য প্রদর্শণ করতেন।
যদিও প্রথম আধুনিক অ্যাকোরিয়ামের প্রচলন ঘটে মৎস্যপ্রেমী ফিলিপ হেনরি গসে-র হাত ধরে। ১৮৫১ সালে তিনি সামুদ্রিক মাছ এবং গাছভর্তি স্বচ্ছ কাঁচের পাত্রটির নাম দিয়েছিলেন ‘অ্যাকুয়াটিক ভিভ্যারিয়াম’। হেনরি গসের নাম দেওয়া মাছ পোষার এই কাঁচ পাত্রটিই পরবর্তীকালে ‘অ্যাকোরিয়াম’ নামে বিপুল পরিচিতি লাভ করে। মৎস্যপ্রেমী হেনরি গসের অ্যাকোরিয়াম দেখেই ১৮৫৩ সালে লন্ডলের চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি করা হয় ‘ফিস হাউস’ নামে বিশালাকার অ্যাকোরিয়াম।
পৃথিবীর একাধিক দেশের উন্নত শহরের বাসিন্দা এবং পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য ওপেন অ্যাকোরিয়াম, আণ্ডার ওয়াটার অ্যাকোরিয়াম, টানেল অ্যাকোরিয়াম এবং অ্যাকোরিয়াম পার্ক নির্মিত হয়েছে। সেই তালিকায় চিন, জাপান, স্পেন, দুবাই, আমেরিকার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চিনের সিমেলং ওসান কিংডম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আণ্ডার ওয়াটার অ্যাকোরিয়াম হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকোর্ডের স্বীকৃতিও অর্জন করেছে।
কলকাতা পার্ক সার্কাস ময়দান মেলায় ভ্রাম্যমান আন্ডার ওয়াটার অ্যাকোরিয়ামে যেমন রয়েছে হাজার হাজার সামুদ্রিক মাছ, তেমনি প্রবেশ পথেই বড়দিনের থিমে সাজানো হয়েছে সবুজ মঞ্চ। সেই মঞ্চে ক্রিসমাস ট্রি, জিঙ্গেলবেল মিউজিকের তালে সান্তার সঙ্গে সেলফি তোলারও ব্যবস্থা রয়েছে।বিশেষ করে শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য অ্যাকোরিয়ামের পাশে ডিজনি স্পটও তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ফাইবার নির্মিত হাতি, সাপ, কুমিরেরও দেখা মিলবে বলেও জানান উদ্যোক্তারা।