পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: আরব আমিরাতের মহাকাশচারী নোরা আল মাতরুশি তার পূর্বপুরুষদের মতোই জীবনের বেশিরভাগ সময় তারার দিকে তাকিয়ে এবং চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে কাটিয়েছেন। এবার তার সেই আশা যেন সত্যি হতে চলছে। চলতি সপ্তাহে নাসার প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম থেকে স্নাতক লাভ করা প্রথম আরব নারী আল মাতরুশি। ৩০ বছর বয়সী এই নারীর মহাকাশ নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ঘটনার কথা মনে আছে।
যেখানে শিক্ষক মজার ছলে মাতরুশিকে চাঁদে ভ্রমণের অভিনয় করেছিলেন। এটি করতে শিক্ষক তখন একটি ক্রাফটেড স্পেসসুট ও তাঁবু দিয়ে তৈরি কৃত্রিম রকেট জাহাজের ব্যবহার করেছিলেন। ওই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মাতরুশি বলেন, আমরা তাঁবু থেকে বেরিয়ে দেখলাম শিক্ষক আমাদের ক্লাসরুমের আলো নিভিয়ে দিয়েছেন। তিনি সম্পূর্ণ ধূসর কাপড়ে কভারড ছিলেন এবং বললেন আমরা চাঁদের পৃষ্ঠে আছি! মাতরুশি আরও বলেন, সেই দিনটি আমার মধ্যে আটকে ছিল। দিনটি আমাকে অনুরণিত করেছিল। সেদিনই আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমি এটি বাস্তবে করতে চাই। আমি আসলেই চাঁদের পৃষ্ঠে যেতে চাই।
প্রশিক্ষণের দিক দিয়ে মাতরুশি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ২০২১ সালে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার সঙ্গে একটি প্রশিক্ষণ যুক্ত হতে আরব আমিরাত স্পেস এজেন্সি কর্তৃক মনোনীত হয়েছিলেন। দুই বছরের কঠোর পরিশ্রম শেষে মাতরুশি, তার সহকর্মী আমিরাতি মোহাম্মদ আলমুল্লা এবং তাদের প্রশিক্ষণ ক্লাসে থাকা আরও ১০ জন এখন সম্পূর্ণ যোগ্য মহাকাশচারী হয়ে উঠেছেন। ‘দ্য ফ্লাইস’ নামে পরিচিত এই দলটি এখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) নাসা মিশনের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার জন্যও প্রস্তুত এই দল।
মাতরুশি বলেন,আমি মানব সভ্যতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমি চাই মানব সভ্যতা চাঁদে পৌঁছে যাক। আমি চাই মানব সভ্যতা চাঁদের বাইরেও আরও এগিয়ে যাক। আমি সেই যাত্রার অংশ হতে চাই। যদিও মাতরুশি নাসা থেকে স্নাতক লাভ করা প্রথম আরব নারী। তবে অন্যান্য আরব নারীরা ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগত মহাকাশ মিশনে অংশ নিয়েছেন।
মাতরুশি নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ হিসাবে হিজাব পরেন। এক্ষেত্রে নাসা তাকে এজেন্সির আইকনিক সাদা স্পেস স্যুট ও হেলমেট পরার সময় চুল ঢেকে রাখতে একটি কৌশল বের করেছে। এটি মূলত এক্সট্রাভেহিকুলার মোবিলিটি ইউনিট বা ইএমইউ নামে পরিচিত। মাতরুশি বলেন, একবার ইএমইউতে প্রবেশ করলে একটি ক্যাপ (মাইক্রোফোন ও স্পীকার লাগানো) পরা হয়; যার ফলে চুল ঢেকে রাখা যায়। স্যুট ইঞ্জিনিয়াররা আমার জন্য একটি অস্থায়ী হিজাব তৈরি করেছে; যেখানে আমি চুল ঢেকে রাখার পাশাপাশি স্যুট পরতে পারি। আমি সত্যিই আমার জন্য তাদের এই কৌশল বের করার প্রশংসা করি।
কাস্টমাইজড স্যুট পরেই মাতরুশি তার সহকর্মী নভোচারীদের সঙ্গে মহাকাশে পা রাখার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। এদিকে নাসা ‘আর্টেমিস ৩’ মিশনের অংশ হিসেবে ২০২৬ সালে মানুষকে চাঁদের পৃষ্ঠে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
মাতরুশি বলেন, আমি মনে করি না একজন মুসলিম হওয়া নভোচারী হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়। বরং একজন মুসলিম হওয়া আমাকে আমার পূর্বপুরুষদের অবদান সম্পর্কে সচেতন করেছে। আমার পূর্বপরুষদের মধ্যে থাকা মুসলিম পণ্ডিত ও বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে জানিয়েছে; যারা মহাকাশ নিয়ে কাজ করেছিলেন। আমি একজন মহাকাশচারী হয়ে উঠছি শুধু সেই উত্তরাধিকারের উপর ভিত্তি করে যা তারা হাজার হাজার বছর আগে শুরু করেছিল।