পুবের কলম প্রতিবেদক: মঙ্গলবার সল্টলেকের মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ভবনে পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ আয়োজিত ‘মাওলানা আবুল কালাম আজাদ’-এর ১৩৪তম জন্মবার্ষিকী’ উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১১ নভেম্বর মাওলানা আবুল কালাম আজাদের জন্মদিন। তাঁর স্মরণে ওই দিনটি ‘এডুকেশন ডে’, হিসেবে পালন করা হয়।
এদিন ‘মাওলানা আবুল কালাম আজাদ পুরস্কার’ প্রদান করা হয় বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ মুনকির হোসেনকে। বেগম রোকেয়া পুরস্কার দেওয়া হয় ভবানিপুরের সাউথ সাবআর্বান হাইস্কুলের মেইন প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার দাসকে। এদিনের অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন পর্ষদ সভাপতি ও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. আবু তাহের কমরুদ্দিন। স্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন শিশু সুরক্ষা কমিশনের অ্যাডভাইসার , প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনন্যা চক্রবর্তী।
এদিনের অনুষ্ঠানে মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী গোলাম রব্বানি পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান।
এদিনের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান বলেন, আমরা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ হতে পারব না, এটা ঠিক, তাঁর কিছু আদর্শ মেনে চলতে পারব। ‘তিনি’ পড়াশোনায় পাণ্ডিত্য অর্জন করে শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। আইআইটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। আটটি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তাই তাঁর সম্পর্কে জানতে হবে এবং জানাতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থার আমুল পরিবর্তনের পাশাপাশি ‘নিজেকে’ রাজনীতির সঙ্গেও সারা জীবন নিযুক্ত রেখেছিলেন এ কথা উল্লেখ, করে সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এডুকেশন সিস্টেম তৈরি করেছেন। খিলাফত মুভমেন্টে বেশি খ্যাতি অর্জন করেছেন। জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন। জামিয়া মিলিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই মন্ত্রী গোলাম রব্বানি মনে করেন, ভারতকে শক্তিশালি করতে শিক্ষাকেই হাতিয়ার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মাওলানা আবুল কালাম আজাদের অবদান ও মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করে আহমদ হাসান ইমরান বলেন, ব্রিটিশ পিরিয়ড থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আলিয়া মাদ্রাসা তৈরি হয়েছিল সেই সময়। মুসলিমদের দানে মাদ্রাসাগুলি গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে ২০ শতাংশ অমুসলিম পড়ুয়া এ রাজ্যের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ বিহারের মাদ্রাসা থেকে পাশ করেছিলেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং মাদ্রাসা শিক্ষা ও শিক্ষককে সম্মান জানান।
মাদ্রাসা শিক্ষার মান আরও উন্নত করার পরামর্শ দিয়ে ইমরানের বক্তব্য, মাদ্রাসাগুলিকে ইউনিসেফও স্বীকৃতি দিয়েছে। মাদ্রাসার মান আরও উন্নত করতে হবে। শিক্ষার বাণিজিকীকরণ হচ্ছে। এতে শিক্ষা ব্যবস্থা ও পড়ুয়াদের ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সম্মান গ্রহণ করার পর বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ মুনকির হোসেন আহমদ হাসান ইমরানের কথায় সহমত পোষণ করে বলেন, শিক্ষায় বেসরকারিকরণ বাণিজ্যকীকরণ হচ্ছে। শিক্ষায় ভেদ রেখা তৈরি হচ্ছে। এতে পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি হবে। মানবতার ঝংকার করে অপসংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। সংস্কৃতির নামেও অপসংস্কৃতি হচ্ছে। সমাজের উন্নয়নে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আত্মসমালোচনার প্রয়োজন। আত্মকেন্দ্রিক শিক্ষা ও চিন্তাধারা নিয়ে বেশিদূর এগোনো যায় না।
এদিন স্মারক বক্তৃতায় মাওলানা আবুল কালাম আজাদের জীবন ও আদর্শ তুলে ধরে অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, প্রত্যেকের শিক্ষার অধিকার রয়েছে, সেটা ‘তিনিই শিখিয়েছিলেন’। শিক্ষার সঙ্গে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের কথাও বলেছিলেন। শিশুদের শিক্ষাদান, প্রাপ্ত বয়স্কদের শিক্ষা, নারীশিক্ষা, প্রযুক্তি শিক্ষার উপর তিনি জোর দিয়েছিলেন। আইআইটি স্থাপন করেছেন। বহু বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অপরীসিম অবদান রয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসা করেন অন্যন্যা চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানে সম্মাননা জ্ঞাপনের পর স্বাগত ভাষনে ড. আবু তাহের কমরুদ্দিন বলেন, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ছিলেন বিপ্লবী। তিনি ছিলেন জার্নালিস্ট। লে’নির মাধ্যমেও মানুষের কাছে বার্তা দিতেন। শিক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। বিভিন্ন সম্পদায়ের মাধ্যমে ইউনিটি গড়ে তুলতে সবসময় প্রচেষ্ঠা ছিল তাঁর।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য সংখ্যালঘু দফতরের অতিরিক্ত সচিব ওবাইদুর রহমান, স্পেশাল সেক্রেটারি শাকিল আহমেদ, জুলফিকার হাসান, ওয়াকফ বোর্ডের সিইও এহেসান আলিপর্ষদের সদস্য এ কে এম ফারহাদ, পর্ষদের উপসচিব আজিজার রহমান সহ বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা।