আহমদ আবদুল্লাহ: ভারতে আসছেন আল ইস্সা। তাঁর পুরো নাম মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ইস্সা । এই ভদ্রলোক কিন্তু যে সে লোক নন। তিনি সউদি শাসিত আরবের বর্তমানে প্রকৃত শাসক, প্রধানমন্ত্রী যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান-এর প্রধান নীতি-নির্ধারকদের অন্যতম। এছাড়া তিনি এক সময়ের প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল। ছিলেন সউদি আরবের বিচারমন্ত্রীও। তাঁকে প্রগতিশীল মহল মনে করেন, তিনি নাকি ‘মডারেট ইসলাম’ বা ‘কোমল ইসলামের’ প্রচারক।
তাঁর প্রতি রয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইসরাইল, জার্মানি, আল সিসি শাসিত মিশর প্রভৃতি দেশের প্রবল সমর্থন। আল ইস্সা ২০২২ সালের হজে আরাফাতের ময়দান থেকে বক্তব্য দিয়েছিলেন। যে স্থান থেকে আল্লাহ-র নবী মুহাম্মদ সা. বিদায় হজের ভাষণ প্রদান করেছিলেন। সারা বিশ্বজুড়ে কোমল বা কঠোর সব মুসলিমরাই আল ইস্সাকে পছ¨ করেনি। তাঁকে ভাষণের জন্য সউদি শাসকরা বেছে নেওয়ায় ব্যাপক সামালোচনা হয়েছে। এ বছর হজে অবশ্য আল ইস্সাকে আরাফাতের ময়দানে ভাষণ দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়নি। আর এই ‘কোমল ইসলামের প্রচারক’ বলতে কি বোঝায়, তা নিয়ে সাধারণ মুসলিম ও আলেম সমাজ কিন্তু ধন্ধে রয়েছেন।
এই মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ইস্সা ভারত সফরে আসছেন। সউদি আরব এবং কথিত ‘কোমল ইসলামের’ সমর্থক দেশগুলি এই আল ইস্সাকে একজন বড় মাপের আলেম অর্থাৎ ইসলামী স্কলার বলে প্রচার করে যাচ্ছেন। জনাব আল ইস্সা-র ১০ জুলাই ভারতে আসার কথা। তাঁর এই হাই প্রোফাইল সফরে তিনি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর, ভারতের জাতীয় সুরক্ষা বিষয়ক পরামর্শদাতা অজিত দোভাল এবং সংখ্যালঘু মন্ত্রী স্মৃতি ইরানীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। যেতে পারেন দিল্লির জামা মসজিদেও।
অনেকে বলছেন, ভারতে এখন নরেন্দ্র মোদিজীর সরকার ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। তাই এই সময় ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ বা রাবেতা আলম ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের ভারত সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এই আল ইস্সা সউদি আরবে শরীয়াহ ভিত্তিক যে আইনগুলি ছিল, তার সংশোধনীতে বিরাট ভূমিকা রেখেছেন। তখন তিনি আইন ও বিচারমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ফ্যামিলি বিষয়ক, মহিলাদের অধিকার প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন-সংহিতায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেন।
সউদি আরবে এখন নাচ, গান, কনসার্ট, মহিলা ও পুরুষের মিক্স পার্টি, মহিলাদের একা বা সঙ্গীর সঙ্গে হোটেলে থাকা প্রভৃতি বিষয়ে অবাধ করে দেওয়া হয়েছে। বিনোদনের নামে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি এখন ঢুকে পড়েছে মক্কার প্রবেশদ্বার জেদ্দাতেও। আর এর পিছনে আল ইস্সা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ফিলিস্তিনের ভূমি দখল ও তাদের উচ্ছেদ করে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে মানবেতর পরিবেশে রিফিউজি ক্যাম্পে পাঠানো, রিফিউজি ক্যাম্পগুলিতে বার বার হত্যাযজ্ঞ, গাজায় ২১ লক্ষেরও বেশি মানুষকে অবরুদ্ধ করে রাখা সত্ত্বেও আল ইস্সা ইসরাইলের ঘোরতর সমর্থক। প্রায় তিনি ইসরাইলি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
দিল্লি ভিত্তিক প্রগতিশীল মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের নয়া সংস্থা খুসরু ফাউন্ডেশনের জনাব হাফিজুর রহমান বলেন, শেখ আল ইস্সা খুবই প্রগতিশীল এবং ইসলামের সংস্কারের সমর্থক (প্রো-রিফর্ম)। তিনি তরুণ-তরুণীদের ইন্টারফেইথ বা আন্ত্যধর্মীয় নানা বিষয়ে গাইডেন্স দিয়ে থাকেন। এছাড়া নারীদের নিয়েও তাঁর প্রগতিপন্থী চিন্তা-ধারা রয়েছে। আল ইস্সা এই খুসরু ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন। তাঁর বক্তব্যের বিষয়বস্তু হবে, ‘কোমল ইসলামের’ প্রচার, বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে সংলাপ, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, আন্ত-সাংস্কৃতি যোগাযোগ এবং ধর্ম ক্ষেত্রে বহুত্ববাদের অনুসরণ। এই সভায় আলিগড় ও জামিয়া মিলিয়া ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আরও অনেক বিশেষজ্ঞ যোগ দেবেন।
শেখ আল ইস্সা অক্ষরধাম মন্দিরে গিয়েও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এছাড়া ভারতের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও তিনি হয়তো বৈঠক করবেন। অভিন্ন দেওয়ানি আইন তুলে দেওয়ার বিষয় ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি হয়তো সংস্কারের কথাই বলবেন।