পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ নবী সা -র বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করার কারণে গ্রেফতার হলেন তেলাঙ্গানার বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিং। মঙ্গলবার সকালে হায়দরাবাদে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। সোমবার রাতেই তাঁর গ্রেফতারির দাবিতে হায়দরাবাদ শহরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ দেখানো হয়।
হায়দরাবাদ শহরের মোড়ে মোড়ে চলে বিক্ষোভ। হায়দরাবাদ সাউথ জোনের ডেপুটি কমিশনার পি সাই চৈতন্য জানিয়েছেন, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷
মঙ্গলবারই পরিস্থিতির প্রবল চাপে এই বিধায়ককে সাসপেন্ড করে বিজেপি বোঝাল এমন রাজনীতি তারা এই মুহূর্তে পছন্দ করছে না। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সকালে ওই বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণ ও হিংসায় উস্কানির অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ (এ), ২৯৫ এবং ৫০৫-এর মতো জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করছে পুলিশ।
নুপুর শর্মার আপত্তিকর মন্তব্যে বিশ্বের দরবারে যে মর্যাদাহানী হয়েছে সে ক্ষত এখনও সম্পূর্ণ শুকায়নি বলে মনে করছেন অনেকেই।
কেবল বিশ্বের ১৫ টি মুসলিম অধ্যুষিত দেশই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নুপুর শর্মার এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছিল। তারই মধ্যে ফের নবী সা.-র বিরুদ্ধে অবমাননামূলক মন্তব্য বিজেপিও ভালো চোখে দেখছে না বলে অনেকের অনুমান । সম্ভবত বিজেপি বুঝেছে গরুপাচারকারী বলে গরিব মুলিমদের পিটিয়ে মারা আর নবী সা.-র অবমাননা এক জিনিস নয়।
নুপুর শর্মার নবী অবমাননা মন্তব্যে গর্জে উঠেছিল বিশ্বের বহু মুসলিম দেশ। বড় বড় আরব মুলুকের শপিংমল থেকে বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছিল ভারতের বহু পণ্য। তেমনটা ফের হোক, স্বভাবিকভাবেই চাইছেনা শাসক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
যে কারণে এক্ষত্রে রাজাকে সাসপেন্ড করতে বেশি সময় নেয়নি দল। তবে যে প্রশ্ন নুপুর শর্মার বেলাতেও উঠেছিল তা হল, কেন এমন বিদ্বেষীকে তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করা হল না।
বিজেপি কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির জারি করা আদেশে টি রাজা সিংকে বলা হয়েছে, তদন্ত চলাকালীন আপনাকে অবিলম্বে পার্টি থেকে এবং আপনার দায়িত্ব থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কেন আপনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না, অনুগ্রহ করে এই নোটিস জারির তারিখ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আপনাকে তার কারণ দেখাতে হবে। আপনার বিশদ উত্তর অবশ্যই ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারীর কাছে পৌঁছতে হবে।
দু’বছর আগে আমেরিকার সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, রাজা বার বার উস্কানি এবং বিদ্বেষমূলক পোস্ট করেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন। সংস্থার ভারতীয় শাখার তৎকালীন পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর আঁখি দাসের হস্তক্ষেপেই ওই বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। এর পরে ঘৃণা এবং হিংসায় উস্কানিমূলক পোস্টের অভিযোগে রাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছিলেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
হায়দরাবাদ ওয়েস্ট জন পুলিশের ডিসিপি জোয়েল ডেভিস জানিয়েছেন, বিজেপি বিধায়কের টি রাজা সিং-এর বিরুদ্ধে অনেকগুলি অভিযোগ পান তাঁরা । তারপরই এদিন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তবে, বিজেপি বিধায়কের দাবি, পুলিশ কীসের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করল, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তাঁর দাবি, তিনি কোনও বিশেষ সম্প্রদয়ের নাম করেননি। তাঁর ভিডিয়োটি ছিল একমাত্র মুনাওয়ার ফারুকির বিরুদ্ধে। নুপুর যে কাজ করেছেন রাজাও সে কাজ করেছেন। ফারুকিকে সামনে রেখে নবী সা. ও উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়েশা রা. সম্পর্কে কুকথা বলেছেন।
নুপুর বলেছিলেন তিনি নিজেদের দেবদেবীর অপমান সহ্য করতে না পেরে নবী সা সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। রাজার দাবিও তাই । তাঁর দাবি মুনাওয়ার কমেডিতে হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে মস্করা করেন। তার জবাব দিতেই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। মঙ্গলবার গ্রেফতারির সময়ে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমগুলি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ তবে ছাড়া পেয়েই তিনি ওই ভিডিয়োর দ্বিতীয় অংশ আপলোড করবেন ৷ তাঁর কথায়, ‘আমি ধর্মের জন্য এইসব করছি, ধর্মের জন্য আমি মরতেও পারি ৷’
এই ঘটনায় তোলপাড় গোটা হায়দরাবাদ। হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, এটা মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য বিজেপির ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা। বিষয়টি নূপুর শর্মা মামলার ধারাবাহিকতা বলেই দাবি করেছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বিজেপি হায়দরাবাদে শান্তির পরিবেশ দেখতে পারে না। বিজেপি দেশের সামাজিক কাঠামো ভেঙে দিতে চায়।
কেবল হায়দরাবাদে নয়, তেলেঙ্গানার বহু জায়গায় বিক্ষোভ হয়। রাজার মন্তব্যের কারণে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে উড়ালপুলের উদ্বোধন পিছিয়ে দেন মন্ত্রী কে টি রামা রাও। সংবেদনশীল সব এলাকাতেই বসানো হয় পুলিশ পিকেটিং। নামানো হয় রাফ, তেলেঙ্গানা স্পেশাল পুলিশ ও গড়ে হাউন্ড। আদিলাবাদ, করিমনগর, নিজামাবাদ, বিকারাবাদ ও মাহবুবনগরের নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করা হয়। তবে বিধায়ক রাজাকে দ্রুত সাসপেন্ড করে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের কাছে দল স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, ফের বিশ্বের দরবারে দেশের মানহানি তারা পছন্দ করছে না। সে কারণে ইস্যুটি নিয়ে অতিরিক্ত হৈচৈ নাও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।