পারিজাত মোল্লা: সাম্প্রতিক সময়কালে কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে বেআইনী নির্মাণ নিয়ে কড়া অবস্থান নিতে দেখা গেছে আদালতকে। জলাশয় ভরাট করেও পুরসভার বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ হচ্ছিল, যা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলাতেই সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ সঠিকভাবে না পালন করার জন্য কলকাতা পুরসভাকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করল হাইকোর্ট। এদিন এই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে।
সম্প্রতি কলকাতার জলাভূমি ভরাট নিয়ে দায়ের হওয়া একটি মামলায় রাজ্য সরকারের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের পেশ করা রিপোর্টে উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাতে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছরে কলকাতা পুরসভার ৪৪টি ওয়ার্ডে ৪,২২২ টি জলাভূমির রেকর্ড অফ রাইটস বদল হয়েছে। জলাভূমি হিসাবে শ্রেণিভুক্ত জমির চরিত্র বদল হয়ে গেছে। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের ল্যান্ড রেকর্ডস অ্যান্ড সার্ভে অ্যান্ড জয়েন্ট রিফর্মস কমিশনারের পেশ করা ওই রিপোর্টে জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভার ১০১ থেকে ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো ৪,২২২টি জলাভূমির রেকর্ড অফ রাইটস পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু এই কাজের জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা নিয়ে রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুরসভার কাছে কোনও তথ্য নেই বলে অভিযোগ।
রিপোর্টে শুধুমাত্র জানানো হয়েছে, বেআইনি ভাবে জমির চরিত্র বদল ও জলাভূমি ভরাটের জন্য ২০১০ সাল থেকে মাত্র ১৭টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার আইন ১৫৫-র ৪সি(৫) নম্বর ধারা অনুযায়ী মোট ১০৫টি শো-কজ নোটিস জারি করা হয়েছে। কিন্তু ওই এফআইআর ও শো-কজগুলির ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে রাজ্যের কাছে কোনও তথ্য নেই। ওই রিপোর্টে আরও উল্লেখ ছিল, সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী ১০১ থেকে ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলাভূমি রয়েছে। বর্তমানে এই জলাভূমিগুলি কোন পরিস্থিতিতে রয়েছে? তা নিয়ে রিপোর্ট পেশ করতে বলেছিল হাইকোর্ট।
মামলাকারীর আইনজীবীর অভিযোগ, ‘ওই রিপোর্টে ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান পেশ করেছে রাজ্য। কিন্তু তারপর বহু দিন কেটে গেলেও ওই জলাভূমিগুলির বর্তমান পরিস্থিতি কী তা নিয়ে রাজ্য অন্ধকারে’।রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র ১৯৮৯ সালের আগে যদি কোনও জলাভূমি ভরাট হয়ে বা চরিত্র বদল হয়ে গিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ওই জমির রেকর্ডস অফ রাইটস পরিবর্তন সম্ভব। আর এখানেই ধন্ধ। রাজ্য সরকারের তরফে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে তাতে ঠিক কোন সময়ে এই বিপুল সংখ্যক জলাভূমির রেকর্ডস অফ রাইটস পরিবর্তন করা হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। সম্প্রতি পৃথক একটি মামলার সূত্রে রাজ্যের পেশ করা এই রিপোর্ট উল্লেখ করেন আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ী। সোমবার এই মামলার শুনানিতে কলকাতা পুরসভাকে কার্যত তুলোধনা করেছে হাইকোর্ট।
প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, “আপনারা জানেন না, কোথায় জলাশয় বন্ধ করে বেআইনি নির্মাণ হয়ছে? বেআইনি নির্মাণ নিয়ে যেসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার কটা মানা হয়েছে?””ভোট ব্যাংক আছে। কিন্তু কিছু তো করা দরকার!” দাবি প্রধান বিচারপতির।এরপরেই কলকাতা পুরসভাকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে আদালত।