দেবশ্রী মজুমদার, বোলপুর: তিন মাস বাড়ল তিন ছাত্রছাত্রীর সাসপেনশনের মেয়াদ। আর সাসপেনশনের এই মেয়াদ বৃদ্ধিকে “অনৈতিক” ও “অগণতান্ত্রিক” বলে দাবি করল বাম ছাত্র সংগঠন। বিশ্বভারতী এই নিলম্বিত ছাত্রছাত্রীরা বলেন, এই সাসপেনশনের ফলে তাঁরা ‘আত্মঘাতী’ হলে দায়ী থাকবেন উপাচার্য। সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বুধবার বিকালে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয় ছাত্রছাত্রীরা।
পেনশন-বেতন না দেওয়ার বিতর্ক কাটতে না কাটতেই আবারও নতুন বিতর্ক দেখা দিল বিশ্বভারতীতে। শিক্ষকদের বেতন দেরিতে হওয়া নিয়ে বিতর্ক ছিলই, এবার নতুন করে পড়ুয়াদের সাসপেনশনের সময়সীমা বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রোক্টর তিনজন ছাত্রছাত্রীকে নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেন যে, কম্পিটেন্ট অথারিটির (উপাচার্য) নির্দেশে তাদের সাসপেনশের সময়সীমা আরও ৩ মাস বাড়িয়ে দেওয়া হল। এই সময়সীমা বৃদ্ধির কথা শুনেই শাস্তির মুখে পড়া ছাত্রের ঘোষণা, “সাসপেন্ড হওয়া কেউ আত্মঘাতী হলে, দায়ী থাকবেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।”
এ বছর ১৪ জানুয়ারি অর্থনীতি ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্র ফাল্গুনী পান ও সোমনাথ সাউ এবং হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিভাগের ছাত্রী রূপা চক্রবর্তীকে সাসপেন্ড করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় ও আন্দোলন করার জন্যে প্রথমে তিন মাসের সাসপেন্ড করা হয়। তার সময়সীমা শেষ হতেই ফের একবার সাসপেনশনের মেয়াদ বাড়ে। দ্বিতীয় বারের মেয়াদ শেষ হওয়ার মুখে, অর্থাৎ ১৪ জুলাই থেকে ফের ৩ মাসের জন্য সাসপেন্ড করে দেওয়া হল পড়ুয়াদের। এই মেয়াদ থাকবে অক্টোবর মাস পর্যন্ত।
ফের শাস্তির মুখে পড়া ছাত্র সোমনাথ সাউ বলেন, “উপাচার্য বিশ্বভারতীরতে অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি করেছেন। তাঁর স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্রের বিরোধিতা করে রুখে দাঁড়ানো ও প্রতিবাদ করাতেই এই পদক্ষেপ। এভাবে প্রায় টানা ১ বছরের কাছাকাছি আমাদের সাসপেন্ড করা হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমাদের ভবিষ্যত শেষ করে দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এর পর আমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনও ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ নেন, আত্মঘাতী হন, তার জন্য দায়ি থাকবেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।”
তিনি আরও বলেন, “একই সঙ্গে, আমাদের সহপাঠীদের ‘মাওবাদী’ হিসাবে চিহ্নিত করে ভবিষ্যত নষ্ট করার চক্রান্তও করছেন তিনি।”
প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা যেতে পারে গত ১৫ জুন এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই তিন ‘বাম মনস্ক’ ছাত্র ছাত্রীকে, মাওবাদী বলে আখ্যা দেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। যার প্রতিবাদ করে দেশের প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও দেন ছাত্রছাত্রীরা।
ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, “সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক ভাবে ছাত্রছাত্রীদের সাসপেন্ড করে রেখেছে। আসলে অনৈতিক কাজের প্রতিবাদের মুখকে বন্ধ রাখতে চাইছে বর্তমান বিশ্বভারতী কতৃপক্ষ।”
যদিও এই বিষয়ে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার কোনও মন্তব্য করেননি। অন্যদিকে বিশ্বভারতী শিক্ষক সংগঠন, বিশ্বভারতী ইউনিভারসিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, উপাচার্যের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে পড়ুয়ারা প্রতিবাদ করায় তাঁদের এই শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।