পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: সমলিঙ্গের বিবাহে সম্মতি দিল না সুপ্রিম কোর্ট। সমলিঙ্গের সম্পর্কে স্বীকৃতি দিলেও সমলিঙ্গে বিবাহে এখনই আইনি বৈধতা নয় বলে জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত।
- ৩:২ দ্বারা সমকামি বিবাহের রায়
- সমকামি বিবাহের কোন আইনি স্বীকৃতি নেই
- নাগরিক ইউনিয়নের কোন সাংবিধানিক বা মৌলিক অধিকার নেই
- কেন্দ্রের উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি
- ক্যুইয়ার দম্পতিদের যৌথভাবে দত্তক নেওয়ার কোনও অধিকার নেই
দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই যুগান্তকারী রায় দিয়েছে আজ। এই মামলায় ভিন্নমত লক্ষ্য করা গিয়েছে। পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের একাধিক সদস্য প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে একমত নন। ৩ জন বিচারপতি সমলিঙ্গে বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার বিপক্ষে রায় দেন। অপরদিকে ২ জন বিতারপতি সমলিঙ্গে বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে রায় দেন। এই রায় নিয়ে একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বেঞ্চ সহ ছিলেন বিচারপতি এস কে কৌল, বিচারপতি এস কে ভাট, বিচারপতি এস আর ভাট, বিচারপতি হিমা কোহলি, বিচারপতি পি এস নরসিমা।
শুনানির সময়, আবেদনকারীরা বলেছিলেন যে ভারত একটি বিবাহ-ভিত্তিক সংস্কৃতি। এলজিবিটি (লেসবিয়ান, গে, উভকামী এবং ট্রান্সজেন্ডার) দম্পতিদের একই অধিকার দেওয়া উচিত, যাতে তারাও বিমা,; মধ্যস্থতা, উত্তরাধিকার, উত্তরাধিকার সিদ্ধান্ত, এমনকি দত্তক গ্রহণ এবং সারোগেসি বিষয়ের অধিকার পায়।
এদিন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, ‘যৌন অভিচারের নিরিখে কাউকে বিবাহের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি কোনও অনড়, অটল বিষয় নয়। বিবাহে বিবর্তন আসে।’ প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বক্তব্য, ‘কেন্দ্রীয় সরকার, সব রাজ্যের সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসন যেন কোনওভাবেই ক্যুইয়ার কমিউনিটিকে তাঁদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না করেন। কোনও ক্ষেত্রেই যেন এই গোষ্ঠীকে বেআইনি হিসেবে দেখা না হয়। ক্যুইয়ার যুগলদের বেআইনি হিসেবে দেখা যাবে না।’
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ব্যক্তিগত স্তরে কোনও কাজ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বিবাহ বর্তমানে যে স্বীকৃতি পেয়েছে, আইন না থাকলে তা সম্ভব হত না। প্রধান বিচারপতি আজ নিজের রায়ে জানান, রূপান্তরকামী কোনও পুরুষ যদি মহিলাকে বিয়ে করতে চান, বা রূপান্তরকামী কোনও মহিলা যদি পুরুষকে বিয়ে করতে চান, তাহলে তাঁরা তা করতে পারবেন।
এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের কাউকে তাঁদের যৌন পরিচয় জানার জন্য থানায় তলব করা যাবে না। তাঁরা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলে তাঁদের সেখানে জোর করে ফেরানো যাবে না। এই সম্প্রদায়ের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করার আগে পুলিশকে প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা প্রত্যেকের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এর আগে মামলাকারীদের দাবি ছিল, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের আওতায় সমলিঙ্গে বিয়েকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। তাঁদের হয়ে মামলা লড়েন মুকুল রোহতগি, অভিষেক মনু সিংঘভি, আনন্দ গ্রোভার, গীতা লুথরা, মেনকা গুরুস্বামীদের মতো আইনজীবীরা। মামলাকারীরা দাবি করেন, সকলেরই সমানাধিকার পাওয়া উচিত। যদিও সমলিঙ্গের বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের বক্তব্য ছিল, সমলিঙ্গে বিয়ের বিষয় নিয়ে একমাত্র সিদ্ধান্ত নিতে পারে সংসদ তথা দেশের আইনসভা। কেন্দ্রের জমা করা হলফনামায় বলা হয়েছিল, ‘সমলিঙ্গে বিবাহ আদতে শহুরে অভিযাত একটি ধারণা’। আদালতে কেন্দ্রের যুক্তি, সমলিঙ্গ বিবাহকে স্বীকৃতি দিলে দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আদিশ আগরওয়ালা বলেছেন, “আমি সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই’।
একজন আবেদনকারী এবং অ্যাক্টিভিস্ট অঞ্জলি গোপালন বলেছিলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছি এবং তা চালিয়ে যাব। দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছুই করা হয়নি, কারণ বিচারপতিরা একমত হননি। আমাদের কাছে এই রায় হতাশাজনক।