পুবের কলম প্রতিবেদক: গত বছরের তুলনায় উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার বাড়লো। এবার সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে মুর্শিদাবাদের কান্দির স্কুলের রুমানা সুলতানা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৯। যা উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাসে এই প্রথম বলে জানিয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস।
ফলাফল প্রকাশের পর সফল পরীক্ষার্থীদের টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে মুখ্যমন্ত্রী জানান, উচ্চমাধ্যমিকে সফল পরীক্ষার্থীদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। জীবনের পথে এগিয়ে চলো, আর অনেক সাফল্য অর্জন করো। এছাড়া অভিভাবক ও শিক্ষকদের অবদানকেও কুর্নিশ জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টেয় ফল ঘোষণার সময় সংসদ সভাপতি মহুয়া দাস জানান, উচ্চমাধ্যমিকে এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৮ লক্ষ ১৯ হাজার ২০২ জন। ছেলেদের পাশের হার ৯৭ শতাংশের উপরে। মেয়েদের ক্ষেত্রেও তাই। তার মধ্যে এ গ্রেড পেয়েছে ৯৫ হাজার ৭৫৮ জন পরীক্ষার্থী। ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৩২৭ জন পরীক্ষার্থী প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ। পাশের হার ৯৭.৬৯ শতাংশ। ছেলেদের হার ৯৭.৭০ শতাংশ। মেয়েদের হারও প্রায় সমান। রাজ্যের সব জেলায় পাশের হার ৯০ শতাংশ বা তার বেশি। বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ ৯৯ শতাংশের বেশি পরীক্ষার্থী। এ বছর প্রথম 10 জনের মধ্যে 4জন মুসলিম. যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি, পরে তারা পরীক্ষায় বসতে পারবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার উত্তরপত্র রিভিউ করা যাবে। সেই রিভিউয়ের জন্য ২৬ জুলাই বেলা তিনটের মধ্যে প্রধান শিক্ষকে মাধ্যমে আবেদন করতে পারবে পড়ুয়ারা। রিভিউয়ে ফলে তারা যে নম্বর পাবে, তাই চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করা হবে।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মাধ্যমিকের পাশাপাশি এবছরের মতো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছিল। তাই বিকল্প মূল্যায়নের ভিত্তিতেই পড়ুয়াদের নম্বর দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে স্কুলগুলিতে মার্কশিট ও সার্টিফিকেটের সঙ্গে অ্যাডমিট কার্ডও দেওয়া হবে। তবে পরীক্ষা না হওয়ায় এবারও কোনও মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এদিন বিকেল ৪ টা থেকে অনলাইনে ফলাফল জানা যাবে. পরীক্ষার্থীরা তাঁদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে রেজাল্টের প্রতিলিপি দেখতে পারবেন।
মহুয়া দাস আরও জানিয়েছেন, প্রথম দশ জনের যে তালিকা প্রকাশ করেছেন তাতে সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে প্রথমে রয়েছে কান্দির রাজা মণীন্দ্র চন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমানা সুলতানা।
রুমানা জানান, অাগামীতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করে বিজ্ঞানী হতে চাই। তবে মেডিক্যালে ভালো র্যাঙ্ক হলে ডাক্তারি নিয়ে পড়তে চান শিক্ষককের একমাত্র মেয়ে সুলতানা।
কান্দি থানার শিবরামবাটি এলাকার বাসিন্দা রুমানা সুলতানার সাফল্যে খুশি তাঁর পরিবার। তিনি চান বড় হয়ে চিকিৎসক হতে।
উল্লেখ্য কান্দির রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমানা। ২০১৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় রুমানা পঞ্চম স্থান দখল করেছিল। দু’বছর আগে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় ৬৮৭ নম্বর পেয়েছিল রুমানা। তার পর ওই স্কুলে ভর্তি হয়েছিল বিজ্ঞান বিভাগে। সে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তেই বেশি ভালবাসে। রুমানার বাবা রবিউল আলম ভরতপুর গয়েসাবাদ অচলা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক। মা সুলতানা পারভিন শিক্ষিকা। করোনা পর্বের মধ্যেই মেয়ের এই সাফল্যে খুশি গোটা পরিবার। রুমানার সাফল্যে উৎফুল্ল তাঁর শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং প্রতিবেশীরা।
রুমানা বলছেন, ‘‘ এই ফলে আমি খুশি, আসলে মাধ্যমিক এবং একাদশ শ্রেণির ফল ভাল ছিল। তাই এমন ফল হয়েছে।’’
রুমানা আরও বলছেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। আমার একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ভাল হয়েছিল। যেহেতু এ বার পরীক্ষা হয়নি, তাই বলব এতে বেশি গুরুত্ব না দিতে। যদি মূল ধারায় পড়াশোনা চালিয়ে যাই, তা হলে আমি ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চাই।’’ জেলার মেয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় ফেসবুকে পোস্ট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী।
সংসদ সভাপতি মহুয়া দাস সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এবারের এককভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে মুর্শিদাবাদের এক মুসলিম মেয়ে রুমানা সুলতানা। রুমানার অাব্বা প্রধানশিক্ষক
ছেলেদের টপকে উচ্চ মাধ্যমিকে শীর্ষে থাকা বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়া রুমানা ৫০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৪৯৯। তবে, এবার যেহেতু উচ্চ মাধ্যমিকের ফল মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয়েছে তাই রুমানাকে প্রথম বলে ঘোষণা না করে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের সখী কুণ্ডু নামে এক ছাত্রী দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৮।
এরইমধ্যে মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে উচ্চমাধমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে, ২ অগাস্ট থেকে ১৪ অগাস্টের মধ্যে শেষ করতে হবে নিজের স্কুলের পড়ুয়াদের ভর্তি প্রক্রিয়া। ১৬ অগাস্ট থেকে ৩১ অগাস্টের মধ্যে ভর্তি চলবে অন্য স্কুলের পড়ুয়াদের।
উচ্চমধ্যমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে,শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে দেওয়া হবে মার্কশিট, সার্টিফিকেট ও অ্যাডমিট কার্ড। সংসদের ৫২টি বিতরণ কেন্দ্রে থেকে তা তুলে দেওয়া হবে স্কুলগুলির হাতে।
একাদশে ভর্তির সময়সীমা বেঁধে দিল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ২২ জুলাই সব স্কুল যাতে পড়ুয়াদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অ্যাডমিশন নোটিস দিয়ে দেয়। পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২ থেকে ১৪ অগাস্টের মধ্যে নিজের স্কুলের পড়ুয়াদের ভর্তি প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে হবে স্কুলগুলিকে।