পুবের কলম প্রতিবেদক: সুব্রত মুখোপাধ্যায় আমার অভিভাবক ছিলেন। আমি তার হাত ধরে ছাত্র রাজনীতি করেছি। ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনের বাড়িতে আমি আসতাম। আমার জন্য একবার গ্রেফতার হয়েছিল। সিপিএম আমলে হকার উচ্ছেদ ঘিরে। সুব্রত মুখোপাধ্যায় বনধ ডেকেছিল। এক কাগজ লিখেছিল বনধ হচ্ছে না। আমি এসেছিলাম বাড়িতে চার-পাঁচ মেয়েকে নিয়ে। তাকে নিয়ে বেরোলাম। ওনার প্রতিবাদের আলাদা ব্যাপার ছিল। এভাবেই রাজ্যের প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সুব্রত মুখ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ছোট বয়সে মন্ত্রী। দু’বার বাদে বিধায়ক। আমাদের সরকারের গুড গভরনেন্স তিনি করেছেন। নবান্নে গেলে আমার কাছে খাবারের কথা বলত। বউদি খুব যত্ন করতেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের চলে যাওয়া পীড়াদায়ক। আমি মানতে পারছি না। পুজোর থিম সুব্রত মুখোপাধ্যায় ট্র্যাডিশনাল করেছিল। যারা পুজো দেখতে আসত তারা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দেখত। আমি সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারি না। আমার কাছে যে ছবি ছিল তা আমি দেখিনা। বন্যা হলেই মেদিনীপুর যেত।’
একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজো উদ্বোধনে গিয়ে সেই পুজোর কর্তা, প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তি দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেজায় চটেছিলেন। সেই কথা মাথায় রেখে পুরসভার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ক্লাব চত্বরেই বসানো হল সুব্রতবাবুর পূর্ণাবয়ব মর্মরমূর্তিও। এদিন মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘যারা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তারা সবাই আছেন। এভারগ্রিন ক্লাবের সবাই আছেন। ক্লাবকে আন্তরিকতা জানাচ্ছি। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নামে আর্কাইভ করেছে। এভারগ্রীন ক্লাব যতদিন বেঁচে থাকবে, সুব্রত মুখোপাধ্যায় থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রীর স্মৃতিচারণায় উঠে এল প্রয়াত নেতার মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রসঙ্গ। তিনি বলেন,‘‘একটা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করতে গিয়ে কি করে মারা গেলেন, আমি সেটা আজও বুঝতে পারিনি। মিছিল করায় আমার জন্য গ্রেফতার হয়েছিল। বাইরে গেলেই আমার জন্য গিফট নিয়ে আসত। বিদেশ থেকে সানগ্লাস নিয়ে এসেছিল। খুব ভালোবাসত আর খুব মনে রাখত। সকলের সাথে হৃদ্যতা ছিল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সব্রত মুখ্যোপাধ্যায় মানে অনেক কথা, অনেক আন্দোলন, অনেক পথচলা। খুব দিলখোলা, মজা করে কথা বলতেন। অনেক ঘটনা আমার স্মৃতিতে আছে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মারা যাওয়ার রাত আমাদের কাছে অমাবস্যা। আমি অনেক কিছু হারিয়েছি। তার জন্য রাজনীতি শুরু করা। মৃত্যু খুব দুঃখজনক। ওনার আরও অনেক বছর কাজ করার ক্ষমতা ছিল। একটা দমকা হাওয়া কেড়ে নিয়ে গেল। ববি এই মূর্তির মুখমন্ডল দেখা উচিত। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। একটু আলো দিয়েও দেখো। ক্লাবকে বলব এক দিনে যেন ভুলে না যাই। জন্ম ও মৃত্যুদিন পালন করতে হবে। অতীত যেন ভুলে না যাই। দুঃখের সাথে স্মরণ করছি। হাসিখুশি সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করছি। তার প্রতিটা কাজ আমাদের ভাবায়। যার কাজ অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে।
পাশপাশি প্রয়াত নেতার স্ত্রী ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়কেই তিনি একডালিয়ার বর্তমান অভিভাবক বলে জানালেন। তাঁর কথায়, ‘‘সুব্রত মুখোপাধ্যায় চলে গেলেও বউদি অভিভাবক। তাঁকে ভুলবেন না’’।