প্যারিস, ২৪ এপ্রিল: ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়ে ফ্রান্স সরকারের রোষানলে পড়লেন সংসদ সদস্য মাথিল্ড পানোট। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি গণহত্যা নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন মাথিল্ড পানোট। ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন ফ্রান্সের ‘লা ফ্রান্স ইনসৌমিস’-এর সংসদ সদস্য পানোট। এমনকি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে ইসরাইলি বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন তিনি। এবার তাঁর বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অভিযোগ তুলল ম্যাক্রো প্রশাসন।
সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদী প্রচারের অভিযোগে মাথিল্ড পানোটকে তলব করেছে প্যারিস পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, তলবকে ভয় পাই না বলে সাফ জানিয়েছেন মাথিল্ড পানোট। তিনি বলেন, “কোনও তলবকেই ভয় পাই না। এধরণের ভয় দেখানোর কৌশলে আমি বিচলিত হব না।” একইসঙ্গে তার স্পষ্ট বক্তব্য, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার বিরুদ্ধে আমার অবস্থানে অবিচল থাকব।
ম্যাক্রো সরকারের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন সংসদ সদস্য। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের উপর সরকারের আক্রমণকে যোগ্য জবাব দিতে জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন এলএফআই-এর (LFI) ডেপুটি গ্রুপ লিডার পানোট।
এদিকে, পানোটকে তলব করা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিশিষ্টরা। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ম্যানন অব্রি নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এই সমন উদ্বেগের।” সাধারণ মানুষকে প্যানোটের সাথে সংহতি প্রকাশের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলাই কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আরেক সংসদ সদস্য ফরিদা আমরানি।
অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ফিলিস্তিন ইস্যুতে কনফারেন্স শেষ মুহূর্তে বাতিল ঘোষণা করে ফ্রান্সের লিল বিশ্ববিদ্যালয়। কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেখিয়েছিল ইসরাইল-ইরানের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা মুখে পড়তে হয় ফ্রান্স প্রশাসনকে। কনফারেন্স বাতিল করা নিয়ে এলএফআই দলের নেতারা অভিযোগ তুলেছিলেন, যারা নেতানিয়াহু সরকারকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন করেন তাদের কাছে এই কনফারেন্স চিন্তার। যে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কনফারেন্স বাতিল করেছে। তীব্র সমালোচনা করে ফ্রান্সের বিরোধী দলের নেতা জিন লুক মেলেনচন বলেছিলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে কনফারেন্স হওয়ার কথা তা বাতিল করা ঠিক হয়নি। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’ পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ফ্রান্স প্রথম থেকেই ইসরাইলের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে আসছে। ফলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনও সম্মেলন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সংগঠিত হোক, চাইছে না ফ্রান্স সরকার। যে কারণেই বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমন করতে চাইছে ইমানুয়েল ম্যাক্রো সরকার বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।