সাইনিউসাইটিস অথবা সাইনাসের সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। তবে না জানা বা গাফিলতির কারণে এই রোগটি অনেক সময়েই এড়িয়ে চলি। লক্ষণ বিবেচনা করে চিকিৎসা করা হলে এটা নিরাময় করা সম্ভব। তার আগের লক্ষণগুলিও জানা দরকার। এটা কেন হয়, এই রোগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কেমন কার্যকর হতে পারে তা নিয়ে একগুচ্ছ পরামর্শ দিলেন ডা. এস জেড খান। সাক্ষাৎকারে সেখ কুতুবউদ্দিন
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সাইনিউসাইটিসে ভালো ফল পাওয়া যায়। নাকে এলার্জি হলে হাঁচি হয়, নাকে-চোখে জল পড়তে থাকে। এতে সহজে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। দেখতে হবে, কোন কোন বিষয় থেকে অ্যালার্জি হয়ে থাকে।
খাদ্যতেও এলার্জি হতে পারে। এলার্জি হলে, নাক থেকে জল পড়ে, চোখ থেকে জল পড়তে পারে। একটু সময় দিয়ে চিকিৎসা করলেই ভালো হয়ে যায়। ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে যে বিষয়ে এলার্জি হয়, তা থেকে বিরত থাকতে থাকতে হবে। ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে পুরোপুরি সেরে যাবে।
নাকের মধ্যে পলিপ, বা টিউমার হলে হোমিওপ্যাথিতে সেরে যেতে পারে। নাকের পার্টিশন খুব নরম হাড় দিয়ে তৈরি। অনেক কারণে বেঁকে যায়, নিশ্বাস নিতে বা ছাড়তে বাধা পায়। নাক থেকে রক্তপাত হওয়া অনেক কারণে হতে পারে।
সাইনিউসাইটিস আসলে কী?
আমাদের নাকের চারপাশে হাড়ের বাতাসে পূর্ণ কুঠুরিগুলোকে সাইনাস বলা হয়। আর সাইনিউসাইটিস হল সাইনাসের ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ। সব থেকে বেশি সাইনিউসাইটিস চিকিৎসার জন্য আসেন। নাকের পাশে ‘এয়ার পকেট’ তার ইনফেকশনকে সাইনিউসাইটিস বলে। বিশেষ করে রাতে বা অন্য কোনও সময় নাক বন্ধ থাকে। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। মাথা ব্যাথা হতে পারে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পাকা সর্দি বের হতে পারে। মাথাও ঘুরতে পারে। সাইনিউসাইটিস ছোট থেকে বড় সব মানুষের হতে পারে।
সাইনাসের প্রদাহের কারণ
সাইনাসের প্রদাহের মধ্যে ম্যাগজিলারি সাইনাসের প্রদাহ সবচেয়ে বেশি হয়। অ্যাকিউট সাইনিউসাইটিস ও শ্বাসনালীর উপরের অংশের প্রদাহ, অ্যালার্জি, অপুষ্টি, স্যাঁতস্যাতে পরিবেশে থাকলে, দীর্ঘদিনের দাঁতের রোগ থেকেও প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
আবার কখনো শ্বাসনালীর ছিদ্র সরু হলেও এটা হতে পারে। তবে বেশিরভাগ সাইনাসের প্রদাহ নাকের ইনফেকশন থেকে হয় মূলত। ঠান্ডা জিনিস খাওয়া, ঠান্ডা হাওয়ায় থাকা, পুকুর বা নদীতে স্নান করাও অন্যতম কারণ।
সাইনিউসাইটিসের লক্ষণগুলো কী
নাকের পাশে ক্রমাগত ব্যথা, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা হতে পারে। এছাড়া সবসময় নাক বন্ধ থাকা, কোনও স্বাদ ও ঘ্রাণ বুঝতে না পারা, সাধারণত বিমর্ষতা, অস্থিরতা ও অনীহা জাগা, মাঝেমধ্যে জ্বর আসার সমস্যা দেখা যায়। মিউকাসের আবরণ পাতলা হয়ে যাওয়া।
নাকের পলিপ
নাকের পলিপ থেকেও সাইনিউসাইটিস হতে পারে। নাকের পলিপের উৎপত্তি মূলত নাকের সাইনাসগুলো থেকেই। আর এই পলিপ আসলে সাইনাসের বা নাকের আবরণের একটি অংশ যা দেখতে অনেকটা আঙ্গুর ফলের থোকার মতো।
পলিপ রোগের সাধারণ উপসর্গগুলো কী কী
নাক বন্ধ পলিপ রোগীদের প্রধান ও একমাত্র উপসর্গ। ঠাণ্ডাজনিত কারণে নাক বন্ধ প্রকট আকার ধারণ করে। পলিপ হলে হাঁচি অন্যতম উপসর্গ। নাক থেকে প্রায়ই পুঁজ বা পানি নির্গত হওয়া। প্রায়ই মাথাব্যথা করা। নাক ব্যথা বা মুখমণ্ডলে ব্যথা অনুভব করা। নাকের পিছনে ময়লা অনুভব করা, যা নাক টানলে কালো কালো পদার্থ বের হয়। খুশখুশে কাশি, বার বার গলা পরিষ্কার করার চেষ্টা। নাক থেকে দূর্গন্ধ বের হতে পারে, নাকে কথা হবে। হা করে বা মুখ খুলে ঘুমানো বা শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া, নাকডাকা ইত্যাদি।
সাইনিউসাইটিস হতে মুক্তি
অ্যালার্জি এবং ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলা। গুমোট ভাব এড়িয়ে আলো-বাতাসপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করা, ঘন বসতি পরিহার করা। পরিমিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করা। নাকের প্রদাহ বা অন্য কোনও নাকের রোগ বা গলার অন্য কোনও সমস্যা, দাঁতের প্রদাহ ইত্যাদির সময়োপযোগী চিকিৎসা করলে অনেক ক্ষেত্রে সাইনিউসাইটিস থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
হোমিও চিকিৎসা
রোগ আর রোগীর পুরো লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে হোমিওপ্যাথিতে সাইনাসের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। স্যাম্ব (ঘুমানোর সময় না বন্ধ হওয়া), অ্যাম্ম-সি (নাক থেকে রক্ত পড়া), ক্যালি- বি (নাকে ঘা), পালস (মোটা হলুদ, সবুজ জলীয় নির্গত হওয়া), ন্যাট. এস (স্যাতসেতে ও বৃষ্টিভেজা আবহাওয়ায় নাক ব্লক), অ্যালার্জির জন্য সাবাদ, অল সি, আর্ম-টি ওষুধগুলি উপযোগী।
পলিপসের জন্য অনেক সময়ই নাক বন্ধ থাকে। এজন্য থুজা, কারসি, লিমনা এম প্রভৃতি ওষুধগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সব সময় অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য যোগাযোগ নম্বরঃ ৯৮৩০২৫৮৮৭৮