পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভোটের আবহে নয়া মোড় নিল সন্দেশখালির ঘটনা। গতকালকেও বাংলা এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তোপ দেগেছিলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কিন্তু শনিবার এক ভিডিও সামনে আসতেই সন্দেশখালির রাজ্য-রাজনীতির মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিল। গতকালকেও বাংলা এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তোপ দেগেছিলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কিন্তু শনিবার এক ভিডিও সামনে আসতেই সন্দেশখালির ধর্ষণের ঘটনা নয়া মোড় নিল।
এ দিন সন্দেশখালির বিজেপি মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কোয়েলের একটি ভিডিও সামনে এসেছে। জানা গেছে, ভিডিওটি গোপন ক্যামেরায় তোলা। যে ভিডিওতে গঙ্গাধরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, সন্দেশ খালির রেখা পাত্রদের ধর্ষণের অভিযোগ সাজানো।
( যদিও পুবের কলম ভিডিও’র সত্যতা যাচাই করেনি)। স্থানীয় এই বিজেপি নেতার দাবি, রেখা পাত্রদের ধর্ষণের অভিযোগ সাজানো। এজন্য বিরোধী দলনেতা তাদের টাকা ও মোবাইল দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গঙ্গাধর একটি চেয়ারে আরাম করে বসে রয়েছেন। আর কেউ বা কারা তাঁর সঙ্গে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে। গঙ্গাধরকে তাঁরা প্রশ্ন করেন, এই আন্দোলন এতদিন টিকে রইল কীভাবে? তার জবাবে গঙ্গাধর বলছেন, “তিনটে ছেলে এ দিক ও দিক যাচ্ছে, গোটা বিষয়টি পরিচালনা করছে। শুভেন্দুর আমাদের উপরে আস্থা আছে। শুভেন্দু এক বার ঘুরে গিয়েছে, তাতেই আন্দোলন এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে”।
গঙ্গাধর ওই স্টিং ভিডিওতে এও স্বীকার করেছেন যে শুভেন্দু তাঁদের টাকা এবং মোবাইল ফোন দিয়ে সাহায্য করেছেন। ভিডিওতে এও বোঝা যাচ্ছে যে প্রশ্ন কর্তা আড্ডার ছলে গঙ্গাধরের থেকে আসল ঘটনা বের করতে চাইছে। এক সময়ে প্রশ্ন কর্তা বলেন, “দাদা, তোমরা কী লেভেলের কাজ করেছ, বুঝতে পারছ? ধর্ষণ হয় নাই, তাকে ধর্ষণ বলে চালিয়েছ। তোমার বাড়ির বউকে দিয়ে এই কাজ করাতে পারতে? আমরা তো পারব না”। তিনি এও প্রশ্ন করেন, কীভাবে ওদের ব্রেনওয়াশ করালেন?
জবাবে গঙ্গাধর বলেন,“শুভেন্দুদার নির্দেশে আমরা এই কাজ করেছি। উনি আমাদের সাহায্য করেছেন। শুভেন্দুদা বলেছেন, এটানা করলে, তাবড় তাবড় লোকদের গ্রেফতার করানো যাবে না। আমরাও ওখানে দাঁড়াতে পারব না”।
ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করাতে মহিলাদের কীভাবে রাজি করানো হয়েছিল তাও বলতে শোনা যায় গঙ্গাধরকে। তিনি বলেন, রেখাই প্রথম জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তাঁকে দেখে বাকি মহিলারা করেছে। যেটা বলেছি ওরা সেটা শুনেছে। ওদের বোঝানো হয়েছে, গ্রেফতার না হলে ওদের টিকতে দেওয়া হবে না। আন্দোলনও সফল হবে না।
এমনকি ভিডিওতে গঙ্গাধরকে এও বলতে শোনা যায় যে, ধর্ষণের অভিযোগগুলি সাত-আট মাসের পুরনো ঘটনা বলে সাজানো হয়েছে। যাতে মেডিকেল পরীক্ষায় ব্যাপারটা ধরা না পড়ে। অনেক ভেবেচিন্তে করতে হয়েছে। গোটা ভিডিওতে বেশ কয়েকবার শুভঙ্কর গিরি নামে এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ আসে। ভিডিওতেও শোনা যায়, এই শুভঙ্কর ন্যাজাটের নেতা। পরে টাকা পয়সার হিসাব নিয়ে সমস্যা হওয়ায় তিনি সরে যান। গঙ্গাধর এও বলেন, শুভেন্দুর পিএ পীযূষও সন্দেশখালিতে গিয়েছেন।
ব্যাপারটা এখানেই থেমে নেই।
সন্দেশখালির ঘটনার পর তফসিলি জাতি ও উপজাতি কমিশনের চেয়ারম্যান সেখানে গিয়েছিলেন। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, গঙ্গাধর বলছেন, এসটি কমিশনের সামনে যে জবানবন্দি দেওয়া হয়েছিল, তাও সাজানো ছিল। সেজন্যও মহিলাদের আগে থেকে বোঝানো হয়েছিল।
ভোটের মুখে স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফাঁসের ঘটনা বাংলায় নতুন নয়। এবারও ব্যতিক্রম হল না। তবে স্টিং অপারেশনে যা দেখানো হয়েছে, তা যে গুরুতর তা নিয়ে সন্দেহ নেই। সন্দেশখালিতে মহিলাদের ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে বিজেপি বাংলা তথা গোটা দেশে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। সেই ঘটনার মৌলিক সত্যতা নিয়েই এবার প্রশ্ন উঠে গেল। এখন দেখার বিজেপি বা শুভেন্দু অধিকারী এই স্টিং অপারেশনের বিষয় নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া দেন। যদিও একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে গঙ্গাধর জানিয়েছেন, এই স্ট্রিং অপারেশন হল ষড়যন্ত্র। তাঁকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।