সুবিদ আবদুল্লাহ্: স্টপেজে টোটো দাঁড়িয়ে। চালক ইসমাইল ডাক দিয়ে চলেছে– ‘সাহবাজপুর– গোলাপগঞ্জ– টাওয়ার মোড়…’। স্কুলের ছুটি হয়েছে। প্রথমদিন ক্লাসে বন্ধুদের পেয়ে আনন্দিত রোশেনারা– আসলাম– রোকেয়ারা। ওদের নিতেই দাঁড়িয়ে আছে টোটোচালক কিশোর ইসমাইল। স্কুলে যাওয়ার কথা ইসমাইলেরও। কিন্তু সংসার টানতে স্কুল ছাড়তে হয়েছে নবম শ্রেণির ইসমাইলকে।
‘ছাত্রযাত্রী’ ভর্তি করে ছুট দিল সাহবাজপুরের দিকে। সওরারি পড়ুয়ারা জানতেই পারল না ইসমাইলেরও আজ স্কুল যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে স্কুলকে চিরদিনের মতো ছুটি দিয়েছে সে। গোলাপগঞ্জ গ্রামের ইসমাইল এক মাস আগেও স্কুলে গিয়েছে। ক্লাস করেছে। পরীক্ষা দিয়েছে। অষ্টম থেকে নবমে উঠেছে ৮০ শতাংশ নম্বর নিয়ে। কিন্তু ভিলেন করোনার তৃতীয় ঢেউ ইসমাইলের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। পরিযায়ী শ্রমিক বাবা আবারও ফিরে এসেছে দিল্লি থেকে। এই নিয়ে তৃতীয় বার তিনি গেলেন ও এলেন। এবার থেকে ভিন রাজ্যে আর যাবেন না সওকত সেখ। দেশেই কাজ করবেন। কিন্তু কাজ কোথায়? ঠিকা মজুরির কাজ একদিন হলে দু’দিন বসে থাকতে হচ্ছে। তাতে ৫টা পেট চলছে না। অগত্যা সংসারের হাল ধরেছে বাড়ির বড় ছেলে ইসমাইল।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কালিয়াচকের গোলাপগঞ্জ থানার বাবুলবোনায় একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ত বছর ১৩-র ইসমাইল। নড়বড়ে নবীন হাতে স্টিয়ারিং ধরে টোটো চালাতে চালাতে ইসমাইল জানায়– ‘বাড়িতে আরও দু’টো ভাই আছে। একজন ষষ্ঠ শ্রেণি অপরজন সপ্তম শ্রেণিতে উঠেছে।’ ভারি কণ্ঠে ইসমাইল জানায়– ‘ওরা পড়াশোনা করুক।’ ওদের পড়াশোনা যেন না ছাড়ে। দৃঢ় প্রত্যয়ের সুর ইসমাইলের কণ্ঠে। ওর কান্নামুখ সামনে এসে যায় সেই লজ্জায় প্রতিবেদককে নামিয়ে দ্রুতবেগে এগিয়ে চলল ওর টোটো।
জানা গেছে– পড়ুয়াদের স্কুলছুট রুখে দিতে মালদার ’বেসরকারি পাবলিক স্কুল অ্যাসোশিয়েসন ’ অনেকদিন ধরে কাজ করছে কালিয়াচকের তিন ব্লকে। কালিয়াচকের সবচেয়ে পৃরনো বেসরকারি স্কুলের ডিরেক্টর জিয়াউল হক এ ব্যাপারে জানান– খোঁজ নিলে জেলার সর্বত্র এমন অসংখ্য স্কুলছুট পড়ুয়ার দেখা মিলবে। বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক পরিচালন কমিটির সদস্যরা চেষ্টা করছেন স্কুলছুট ঠেকাতে। এই উদ্যোগে সরকারি শিক্ষকদের যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।