পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ সউদি আরবের সিনিয়র যুবরাজরা ৬০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের রিয়েল এস্টেট, ইয়াট এবং শিল্পকর্ম বিক্রি করেছেন। রবিবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে এমনটাই লেখা হয়েছে। সংবাদপত্রটি দাবি করেছে রাজপরিবারের সদস্যরা নগদ অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। তাদের এইভাবে অর্থ সংগ্রহের পিছেন রয়েছেন বর্তমান শাসক তথা যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। রাজকুমারদের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছিলেন যে রাজপরিবারের কিছু সদস্যের নগদ অর্থের দরকার। সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ কর, কর্মীদের বেতন, বিমান এবং জাহাজের পার্কিং ফি সহ নানা বিল পরিশোধের জন্য তাদের চাই নগদ অর্থ। আর সেই অর্থ জোগাড়ের জন্য বিদেশে সম্পদ বিক্রি করছেন রাজপরিবারের অনেকে। মুহাম্মদ বিন সালমান এই যুবরাজদের অতিরিক্ত খরচের অভ্যাসে রাশ টানতে চাইছেন। ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে তাদের বেহিসেবি খরচের উৎস।
৩৬ বছর বয়সি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান সউদি প্রাসাদে খরচ কমাচ্ছেন। এর ফলে হাজার হাজার রাজপরিবারের সদস্যরা বিদ্যুৎ বিল এবং জলের বিল সহ বাড়তি যেসব সুবিধা পেতেন, এখন থেকে তারা তা আর পাবেন না। এতদিন যে বাড়িতে খরচ তারা পেতেন তা ছিল সউদি সরকারের বার্ষিক খরচের কয়েক মিলিয়ন ডলার। এই রাজপরিবারের কয়েকজনের খরচ মাসে ৩০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এমনটাই সূত্রের খবর।
ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নালকে যিনি এই খবর দিয়েছেন তিনি বলেছেন, এই যুবরাজরা বেশিরভাগই কোনও কাজকর্ম করেন না। কেবল খরচ করেন। তাঁরা অনেকে মুহাম্মদ বিন সালমানকে ভয়ও পান। এই রাজপরিবারের লোকেরা পিছনের পকেট নগদ অর্থ ঢোকাতে চাইছেন। খরচের জন্য তাদের নগদ অর্থের দরকার। সম্পদের দরকার নেই।
সূত্রের খবর সম্প্রতি বিক্রি হওয়া যুবরাজদের সম্পদের মধ্যে ছিল ১৫৫ মিলিয়ন ডলার ব্রিটিশ এস্টেট। ২০০ ফুটের বেশি লম্বা দু’টি ইয়াট এবং প্রয়াত রাজার বিয়ের উপহার হিসেবে পাওয়া মুঘল অলংকার। লন্ডনের নাইটসব্রিজ-এর পাশের একটি প্রাসাদও বিক্রি করা হয়েছে বলে খবর। ২০২০ সালে রেকর্ড ২৯০ মিলিয়নে ডলারে বিক্রি হয়েছিল প্রাসাদটি। আইফেল টাওয়ারের পাশে প্যারিস ম্যানশন বিক্রি হয়েছিল ৮৭ মিলিয়ন ডলারে। জীবনযাত্রার মানকে এই যুবরাজরা এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন যে যেকোনও খরচই তাদের কম মনে হয়। যুবরাজদের সম্পত্তি বিক্রি খবর রাখেন এমন এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, যত অর্থই দেওয়া হোক, তাদের কাছে সেসব নস্যি। তাদের খরচ মাত্রা ছাড়া হয়ে গিয়েছে। এই খরচে রাশ টানা হলে তা দিয়ে খরচ চালাতে তাদের সময় লাগবে।
শীর্ষ রাজপরিবারের সদস্যরা তেল এবং রিয়েল এস্টেট বিক্রির পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়িক লেনদেনের মাধ্যমে বছরে বিলিয়ন ডলার আয় করেন।
যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান তাদের সেখান থেকে ধীরে ধীরে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। মুহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, তিনি দুর্নীতি বিরোধী যে ঝাঁকুনি দিয়েছেন তাতে একটা ব্যাপক সাফল্য এসেছে। ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা এবং ১৭ জন রাজকুমার-সহ কয়েকশো লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবটাই হয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধতা আনার জন্য। লক্ষ্য ছিল তাদের কাছ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধার। দুর্নীতির দায়ে জেল খেটেছে এমন অনেকের দিকে কড়া নজর রাখছে সউদি সরকার। তাদের অনেকের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দেশের ভেতরেও এমন ব্যাক্তিদের ওপর বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।