শুভজিৎ দেবনাথ, জলপাইগুড়ি: শিব ঠাকুরের আপন দেশে, আইন কানুন সর্বনেশে সুকুমার রায় “একুশে আইন” কবিতায় অনেকদিন আগেই এই কথা বলে গিয়েছিলেন , যার বাস্তব প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে সাঁকোয়াঝোড়া-১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতে।
সম্প্রতি বানারহাটের সাঁকোয়াঝোড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে নির্মিত গয়েরকাটা হাই স্কুল মাঠের গ্যালারির নিচে নির্মিত এগারোটি দোকান ঘরের স্টল বন্টনের এক বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয় গয়েরকাটায়।
যেই বিজ্ঞপ্তিতে লেখা ছিলো দোকান ঘর পেতে হলে আবেদনকারীদের প্রথমে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্যালয়ে এসে আবেদন করতে হবে। যেপাঁচ হাজার টাকা অফেরত যোগ্য। এরপর লটারির মাধ্যমে যারা সেই দোকান ঘর গুলি পাবে, তাদেরকে এক লক্ষ টাকা করে আবার দিতে হবে সেটাও না ফেরত যোগ্য। সেই খবর বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসে গ্রাম পঞ্চায়েত কতৃপক্ষ।সোমবার দুপুরে একলক্ষ টাকাকে ফেরত যোগ্য বলে তাদের নোটিশ বোর্ডে সংশোধনী নোটিশ টানিয়ে দিতে বাধ্য হয়। যদিও পাঁচ হাজার টাকা অফেরত যোগ্য – এই সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বিনোদ ওরাও। তিনি বলেন,ভুল বশত ওটা এক লক্ষ টাকা না ফেরত যোগ্য বলে প্রিন্ট হয়ে গিয়েছিলো। এক লক্ষ টাকা নিরাপত্তার স্বার্থে রাখা হবে পরবর্তীতে দোকান ঘর ছেড়ে দিলে সেটা ফেরৎ দেওয়া হবে। আবেদনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হবে না। বোর্ড মিটিং করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলাশাসক যেখানে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন, “আবেদনপত্রের জন্য এভাবে অফেরতযোগ্য টাকা নেওয়া যায় না” সেখানে গ্রাম পঞ্চায়েত কিভাবে বোর্ড মিটিং করে এই রকম অবৈধ সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
সাঁকোয়াঝোড়া-১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের এই ধরনের সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপ সম্পর্কে বলতেই হয় এ যেন শিব ঠাকুরের আপন দেশ! হবু চন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী, যার যা খুশি তাই করে যাচ্ছে!
গয়েরকাটা সিপিআইএম নেতা বিরাজ সরকারের হুশিয়ারি শুধু এক লক্ষ টাকা ফেরত যোগ্য করলেই হবে না।অবিলম্বে গ্রাম পঞ্চায়েত কতৃপক্ষ আবেদন ফ্রি পাঁচ হাজার টাকার পরিবর্তে গরীব মানুষ দের স্বার্থে ফেরৎ যোগ্য একশো থেকে পাঁচশো টাকা করুক। আর নিরাপত্তার স্বার্থে যেই এক লক্ষ টাকা নিচ্ছে সেটাকে কুড়ি হাজার টাকা করুক একই সঙ্গে দোকান ঘর ভাড়া দুই হাজার টাকার পরিবর্তে এক হাজার টাকা করুক। কারণ গয়েরকাটার অর্থনৈতিক অবস্থা এই মুহূর্তে ভালো নেই। নাহলে আমরা আমাদের আইনজীবীদের মাধ্যমে আইনের দারস্ত হতে বাধ্য হবো। বোর্ড মিটিং এ সিদ্ধান্ত নিয়ে তো গরিব মানুষের পেটে লাথি মারতে পারে না।
একই দাবি তুলেছেন ধূপগুড়ির উত্তর – পূর্ব মন্ডলের সভাপতি কৌশিক নন্দী।তিনি বলেন আবেদন ফ্রি গ্রাম পঞ্চায়েত কতৃপক্ষ অবিলম্বে পাঁচ হাজার টাকায় পরিবর্তে পাঁচশ টাকা করুক সেটিও যাতে ফেরৎ যোগ্য হয়।নাহলে আমরা আমাদের সাংসদ ও বিধায়কদের নিয়ে ডেপুটেশন দিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।
একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিবের কথায়, কিছুতেই এটা করতে পারে না গ্রাম পঞ্চায়েত কতৃপক্ষ ১০০- ২০০ সর্বোচ্চ ৫০০ অব্দি ভাবা যেতে পারে। কিন্তু এই হাজার হাজার টাকার ব্যাপার এটা কেউ কোর্টে গেলেই স্টে অর্ডার হয়ে যেতে পারে ।
আরো বিস্তারিত জানতে জেলা শাসক ও বানারহাটের বিডিও কে হোয়াটস অ্যাপ এ এসএমএস করা হলে খবর লেখা পর্যন্ত কেউ কোনো রকম মন্তব্য করেননি।