পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর পরই বৃহস্পতিবার দিল্লিতে একটি মসজিদ পরিদর্শন করলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। আরএসএস সুপ্রিমো ভাগবত এদিন অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশনের প্রধান ধর্মনেতা উমর আহমেদ ইলিয়াসির সঙ্গে দেখা করেন। এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলে দুজনের মধ্যে।
ধর্মনেতার পুত্র সুহাইব ইলিয়াসী এই বৈঠককে ইতিবাচক বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘দুজনের মধ্যে চলা এই বৈঠক আমাদের দেশের কাছে একটি সদর্থক বার্তা নিয়ে আসবে। আমাদের মধ্যে একটি পরিবারের মতো আলোচনা হয়েছে। এটি খুব ভালো একটি দিক যে, আমাদের নিমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে উনি(মোহন ভাগবত) এই বৈঠকে যোগদান করেছেন।’
উল্লেখ্য, এই ইমাম সংগঠনটি জন্মলগ্ন থেকেই বিজেপি সরকারের কাছের সংস্থা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত কিভাবে শক্ত করা যায় তা নিয়ে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত মুসলিম বুদ্ধিজীবী নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। ভারতের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি এবং দিল্লির প্রাক্তন উপরাজ্যপাল নাজিব জঙ্গ-সহ কয়েকজন মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
একদিকে কর্নাটকের হিজাব মামলা, নবী (সা.) এর নামে বিজেপির বহিষ্কৃত নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে উত্তেজনা, বারানসীর জ্ঞানভাপী মসজিদ চত্বরের মধ্যে উপাসনালয়ে হিন্দু প্রার্থনার অনুরোধের আবেদন, প্রতিটি মসজিদের নীচে একটি শিবলিঙ্গ সন্ধানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভাগবতের বিবৃতির কয়েক সপ্তাহ পরে দলটি একটি বৈঠক করতে চায়। সেই বৈঠকে সাড়া দিয়েই মুসলিম বুদ্ধিজীবী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভাগবত।
আরএসএস মুখপাত্র সুনীল আম্বেদকর জানিয়েছেন, আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ হল বিজেপির আদর্শ মেনে চলা পরামর্শদাতা। আরএসএস-এর সরসঙ্ঘচালক সর্বস্তরের মানুষের দেখা করেন। এটি সাধারণ একটি সংবাদ আদান প্রদানের প্রক্রিয়া।
গত ২২ আগস্ট মোহন ভাগবত পাঁচজন মুসলিম নেতাদের সঙ্গে দেখা করে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বৈঠক সারেন। দুপক্ষে মধ্যে কার কি বিষয় নিয়ে আপত্তি সেই নিয়ে আলোচনা হয়।
মুসলিম বুদ্ধিজীবী, প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি বৈঠকের পর জানান, ৭৫ মিনিট ধরে চলা এই বৈঠকে দুপক্ষের মধ্যে বহু সদর্থক আলোচনা হয়। সেই বৈঠকে মোহন ভাগবত দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন। আরএসএস-এর প্রধানের বক্তব্য তুলে ধরে এস ওয়াই কুরেশি বলেন, ভাগবত জানিয়েছেন তিনি দেশের অসামঞ্জস্যের পরিবেশে খুশি নন। দেশ এগিয়ে যেতে পারে শুধুমাত্র সহযোগিতা ও সংহতিতেই।
এছাড়াও কুরেশির সঙ্গে ভাগবতের আলোচনায় উঠে এসেছে গরু জবেহ প্রসঙ্গ। ভাগবত তাকে জানিয়েছেন, গো হত্যা হিন্দুদের মর্মাহত করে।
মুসলিম বুদ্ধিজীবী এস ওয়াই কুরেশি বলেন, ‘আমরা বলেছি, ‘গরু জবেহ বাস্তবে দেশজুড়ে নিষিদ্ধ। মুসলিমরা আইন মেনে চলে এবং যদি কেউ আইন লঙ্ঘন করে তবে তা বড় ভুল, তার শাস্তি হওয়া উচিত।’ আর একটি বিষয় নিয়ে আপত্তি মোহন ভাগবতের, তা হল ‘কাফির’ শব্দের ব্যবহার।
এই শব্দ হিন্দুদের খারাপ লাগে বলে জানান তিনি। এর উত্তরে কুরেশি জানিয়েছেন, ‘মূল আরবীয় শব্দ কাফিরের অর্থ ধর্মে ও সত্যে অবিশ্বাসী (যদিও পবিত্র কুরআনে একাধিক স্থানে কুফর শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, সত্য বা ধর্ম মিটিয়ে দেওয়ার জন্য ঔদ্ধত্যকারীদের বিরুদ্ধে। ) এই শব্দটা নিরপেক্ষ ছিল, এখন অবমাননাকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কুরেশি জানান, তাঁরা ভাগবতকে পাল্টা জানিয়েছেন, ‘কিছু দক্ষিণপন্থী মানুষ মুসলিমদের ‘জেহাদি’, ‘পাকিস্তানি’ বলে। তারা মুসলিমদের আনুগত্য নিয়ে সন্দিহান তাই প্রতিনিয়ত তাদের কাছে দেশপ্রেমের প্রমাণ চাওয়া হয়। কিন্তু মুসলিমরাও ভারতীয়। এই বক্তব্যে সম্মতি জানিয়েছেন ভাগবত।
কুরেশি তাকে জানিয়েছেন, ‘আমরা একই জিন বহন করি। এখানে মুসলমানদের অধিকাংশই ধর্মান্তরিত’।
এস ওয়াই কুরেশি আরও জানিয়েছেন, আরএসএস প্রধান আমাদের অনেক আশ্বাস দিয়েছেন।
দিল্লির প্রাক্তন উপরাজ্যপাল নাজিব জঙ্গ, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন চ্যান্সেলর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জমির উদ্দিন শাহ, প্রাক্তন সাংসদ শহীদ সিদ্দিকী এবং ব্যবসায়ী সাঈদ শেরভানিও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।