পুবের কলম প্রতিবেদক: বাম চোখে দেখতে পাচ্ছিলেন না বছর বিয়াল্লিশের এক মহিলা। মাঝে মধ্যে তাঁর এই চোখে এত যন্ত্রণা হতো যে অসহনীয় হয়ে উঠতো পরিস্থিতি। অনেক হাসপাতালে ঘুরেছেন, কিন্তু সমস্যা থেকেই গিয়েছিল। অবশেষে, একদিকে বিরল এবং অন্য দিকে ঝুঁকিপূর্ণ জটিল অস্ত্রোপচারে এই রোগীর বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরল। তবে শুধুমাত্র দৃষ্টিশক্তি ফেরানো নয়, এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগীর বাম চোখকে অন্ধত্বের হাত থেকেও রক্ষা করলেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এই ঘটনা আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের।
কলকাতার সরকারি এই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর বিয়াল্লিশের এই মহিলা রোগী সপ্তাহ তিনেক আগে এসেছিলেন এখানকার নিউরো সার্জারি বিভাগের আউটডোরে। চিকিৎসকদের তিনি জানান, বেশ কয়েক মাস আগে থেকে তিনি আর বাম চোখে দেখতে পাচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণাও হয়। তবে, তাঁর ডান চোখে কোনও সমস্যা নেই। চোখের সমস্যা মনে করে তিনি চোখের ডাক্তারের কাছেও গিয়েছেন। কিন্তু, বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি। এর পর অন্য বিভিন্ন হাসপাতালেও ঘুরেছেন। কিন্তু, সমস্যা থেকেই গিয়েছে। তাঁর সঙ্গে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টও ছিল। আউটডোরে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পরে এই রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়।
নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা এর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন যে, এই রোগীর বাম চোখের ভিতরে, পিছনের দিকে একটি টিউমার রয়েছে। এই টিউমার না সরানো হলে বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরবে না। কিন্তু, এই টিউমার যেখানে রয়েছে, সেখানে চোখের মুভমেন্টের জন্য পেশিগুলি রয়েছে। এ দিকে, এই স্থানে অস্ত্রোপচার করে টিউমার সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি খুবই জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। চিকিৎসকরা ভাবনাচিন্তা করে নেন কীভাবে চোখের পিছনের ওই স্থানে পৌঁছে অস্ত্রোপচার করা হবে। ঠিক করা হয়, নয় ফেব্রুয়ারি এই অস্ত্রোপচার করা হবে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় অস্ত্রোপচার। শেষ করা হয় বিকাল সাড়ে তিনটে নাগাদ।
টিউমার সরিয়ে দেওয়ার জন্য এই রোগীর মাথার উপরে হাড় কেটে তাঁর বাম চোখের পিছনের ওই স্থানে পৌঁছনো হয়। এর পরে পিছনের দিক থেকে চোখ খুলে কেটে কেটে ওই টিউমার বের করা হয়। মাইক্রোস্কোপের সাহায্য নিয়ে হয় এই অস্ত্রোপচার। আকারে এই টিউমার খুবই ছোট হলেও ওই স্থানে বড় বিপদের কারণ হয়ে ছিল। কারণ, এই টিউমারের কারণে রোগীর বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে গিয়েছিল। আর, এই টিউমার সরিয়ে দেওয়া সম্ভব না হলে, এই চোখের দৃষ্টিশক্তি চিরকালের মতো নষ্ট হয়ে যেত। ফলে, এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শুধুমাত্র রোগীর বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া নয়, এই চোখকে অন্ধত্বের হাত থেকেও রক্ষা করল রাজ্যের এই সরকারি হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দীনেশ জালুকার নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল।
এই অস্ত্রোপচার এবং রোগীর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চিকিৎসক দীনেশ জালুকা বলেন, ‘অনেক হাসপাতাল ঘুরে আমাদের আউটডোরে এসেছিলেন এই রোগী। বাম চোখে দেখতে পাচ্ছিলেন না তিনি। এই ঘটনা বিরল। অস্ত্রোপচারও খুব জটিল, ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পরে রোগী আবার বাম চোখে দেখতে পাচ্ছেন। রোগী এখন ভালো আছেন। তাই রবিবার তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।’