পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ আবেগ, বিতর্ক, বিরোধিতা একত্রে সমান সক্রিয় ছিল। একথাও বলা যায়, ভারতের রাজনীতির গতিমুখ বদলে দিতে পেরেছিল যে ধর্মীয় উন্মাদনা সেটা ছিল অযোধ্যায় ৫০০ বছরের পুরনো বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণ। এবার সেই কাজটিই সম্পূর্ণ হতে চলেছে। আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা।
রামমন্দির উদ্বোধন ঘিরে বিতর্ক, উদ্দীপনার পারদের মধ্যে দিয়ে অবশেষে আগামী ২২ জানুয়ারি সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। প্রধানমন্ত্রী মোদির উপস্থিতিতেই রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। বহু বছর ধরে প্রতীক্ষা করেছিলেন রামভক্তরা। অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। রামমন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ২২ জানুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত চলবে নানা অনুষ্ঠান। এই সময় রামকথা ও রামলীলা চলবে। শ্রীরামচন্দ্রের শিশু রূপ রামলালা বিরাজ করবেন প্রধান গর্ভগৃহে। প্রথম তলায় থাকবে শ্রীরাম দরবার। মন্দিরে থাকছে মোট পাঁচটি প্যাভিলিয়ন। এই পাঁচটি প্যাভিলিয়নের মধ্যে থাকবে নাচের জন্য প্যাভিলিয়ন, রঙের জন্য প্যাভিলিয়ন, প্রার্থনার প্যাভিলিয়ন, ভক্তদের সমবেত হওয়ার প্যাভিলিয়ন এবং কীর্তনের প্যাভিলিয়ন। মন্দিরে বিভিন্ন দেব-দেবীর সুন্দর সুন্দর মূর্তি স্থাপিত হবে। রামমন্দিরের পিলার ও দেওয়ালে খোদিত হয়েছে দেব-দেবীর মূর্তি। মন্দিরের চার কোণায় থাকবে আরও চারটি মন্দির। এই চারটি মন্দির হচ্ছে ভগবতী, গণপতি, সূর্যদেব ও মহাদেবের জন্য।
উদ্বোধনের দিন উত্তরপ্রদেশের পুলিশের তরফে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তাবলয় থাকবে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি বিশেষ টাস্কফোর্স রামমন্দিরের নিরাপত্তার সম্পূর্ণ দায়িত্বে থাকছে। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সামরিক গোয়েন্দাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে কড়া সতর্কতায় রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনও ফাঁক রাখতে চায় না যোগী সরকার। ২২ জানুয়ারি নির্ধারিত দিনে বুম ব্যারিয়ারস, বোলার্ডস, সিসিটিভি ক্যামেরা প্রবেশ দ্বারসহ গোটা চত্বরজুড়েই মোতায়েন করা হয়েছে। থাকছে বুম ব্যারিয়ার (টায়ার কিলার নামেও পরিচিত) এই বুম ব্যারিয়ার অননুমোদিত যানবাহনকে ঢুকতে বাধা দেবে। কার্যকরভাবে রাস্তাঘাট, হোটেল এবং অফিসের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের পয়েন্টগুলিকে ব্লক করে দেবে।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ভারতের প্রথম রাজ্য পুলিশ বাহিনী, হবে যারা রামমন্দিরের আসন্ন এই অনুষ্ঠানে অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। এই অ্যান্টি ড্রোন প্রযুক্তি অবাঞ্ছিত ড্রোনগুলির পথ আটকাবে। হলুদ ও রেড জোনে মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় কমান্ড বাহিনী, অসংখ্য সিসি ক্যামেরা এই গুরুত্বপূর্ণ জোনে মোতায়েন করা হবে। এই সিসি ক্যামেরাগুলি ৯০ দিনের রেকর্ডিং ক্ষমতা সহ সারা শহরজুড়ে ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ করে।
যানজট এড়াতে ২০টি জায়গায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের লক্ষ্য নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত, নিরাপদ করা। যানজট নিয়ন্ত্রণ করা হবে রিকাবগঞ্জ, সিভিল লাইন, হনুমান গুহা, শ্রীরাম হাসপাতাল, নয়া ঘাট, সাকেত পেট্রোল পাম্প, দেবকালী বাইপাস, সুলতানপুর বাইপাস, রায়বেরেলি বাইপাস, সাহাদাতগঞ্জ বাইপাস, গুরু গোবিন্দ সিং স্কোয়ার, পুলিশ লাইন, তেধি বাজার, উদয় স্কয়ার, দেবকালী তিরাহা, গুoি বাজার, পোস্ট অফিস স্কোয়ার, নাকা তিরাহা, গুরু গোবিন্দ সিং, সাহাদাতগঞ্জ হনুমানগোড়ী স্কোয়ার, এবং ডিএম স্কোয়ার।
জেলা প্রশাসন কৌশলগতভাবে ২০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জরুরি কল বক্স স্থাপন করেছে। এই বক্সগুলির কাজ হবে জরুরি পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রিলে করতে থাকা। নজরদারি চালানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়াল রিসার্চ ল্যাবরেটরির ডেপুটি ইঞ্জিনিয়ার রঘুনাথ মনোহরের তৈরি উচ্চ প্রযুক্তির ২৫টি টেলিস্কোপ সরকার নিয়েছে। ৯টি লেন্স বিশিষ্ট এই টেলিস্কোপগুলি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে কোনও বিপজ্জনক কার্যকলাপ দেখলেই কঠোর ব্যবস্থা নেবে যেগুলি।
অযোধ্যার রামমন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের আগে ১১ দিনের একটি বিশেষ আচার অনুষ্ঠান শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১২ জানুয়ারি মোদি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘অযোধ্যায় রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার আর মাত্র ১১ দিন বাকি। আমি সৌভাগ্যবান যে আমিও এই শুভ অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে পারছি। প্রভু আমাকে প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় ভারতের সমস্ত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছেন। এই কথা মাথায় রেখে আমি আজ থেকে ১১ দিনের একটি বিশেষ আচার শুরু করছি। আমি সমস্ত মানুষের কাছে আশীর্বাদ চাইছি। এই মূহূর্তে আমি আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’ নাসিক থেকে তিনি তাঁর আচার অনুষ্ঠান শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।
শ্রীরাম জন্মভূমি ট্রাস্ট সোমবার, ৮ জানুয়ারি ঘোষণা করেছে যে অযোধ্যায় রামমন্দিরের গর্ভগৃহ সম্পূর্ণ হয়েছে। ২২ জানুয়ারি নির্ধারিত পবিত্র অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষা করছে সেই শুভ মুহূর্ত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ বিশিষ্ট অতিথিরা এই জমকালো অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। গর্ভগৃহে রামলালার অভিষেক অনুষ্ঠান বা প্রাণ প্রতিষ্ঠার সাক্ষী থাকবে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। অথিতিদের তালিকায় রয়েছে, ১০ হাজারেরও বেশি ব্যবসায়িক টাইকুন, বিনোদন, খেলাধুলো থেকে রাজনীতির মানুষ, শিল্পপতি থেকে ধনকুবেররা।
অযোধ্যার রামমন্দির হতে চলেছে পৃথিবীর অন্যতম বড় মন্দির। এই মন্দির হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মন্দির। মূল নকশাটির তৈরি হয়েছিল ১৯৮৮ সালে আহমদাবাদে। সেখানকার স্থানীয় সমপুরা পরিবার এই মন্দিরের পরিকল্পনাটি করেন। বিগত ১৫ বছর ধরে এই সমপুরা রামমন্দিরের নকশার কাজ করে আসছেন। ২০২০ সালে রামমন্দিরের পুরনো নকশায় কিছু পরিবর্তন এনে নতুন নকশা তৈরি করে সমপুরা পরিবার। অযোধ্যার রামমন্দিরের মূল স্থপতি হলেন চন্দ্রকান্ত সমপুরা ও তাঁর দুই পুত্র নিখিল সমপুরা ও আশিস সমপুরা। স্থাপত্যের কাজে আর্কিটেকচারের ‘নাগরা’ স্টাইল মেনে রামমন্দির নির্মাণ করেছে সমপুরা পরিবার।
অযোধ্যার নবনির্মিত রামমন্দির হল ৩৮০ ফুট লম্বা ২৫০ ফুট চওড়া, উচ্চতায় ১৬১ ফুট। তিনতলা নির্মিত এই মন্দিরের প্রতিটি তলার উচ্চতা ২০ ফুট করে। মন্দিরে মোট পিলারের সংখ্যা ৩৯২টি, প্রবেশদ্বার রয়েছে ৪৪টি।