পুবের কলম,ওয়েবডেস্কঃ ভারতকে বিশাল অঙ্কের রাফালে যুদ্ধবিমান বিক্রি সংক্রান্ত ২০১৬ সালের বিতর্কিত চুক্তিতে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে ফ্রান্সের এক বিচারককে। শুক্রবার এই খবর জানিয়েছে ন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল প্রসিকিউটার বা পিএনএফ। ভারত এবং ফ্রান্সের দাসো সংস্থার মধ্যে ৩৬টি যুদ্ধবিমান ভারতকে বিক্রির জন্য ৭.৮ বিলিয়ন ইউরো বা ৯.৩ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি হয়েছিল। প্রথম থেকেই এই চুক্তি নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে এবং ফ্রান্স ও ভারত উভয় দেশেই এই চুক্তিকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পিএনএফ গোড়াতে যুদ্ধবিমান বিক্রি নিয়ে তদন্তে অনীহা প্রকাশ করে। কিন্তু পরে ফ্রান্সের ওয়েবসাইট মিডিয়া পার্ট এক অন্তর্তদন্তমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে চুক্তিকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে। সেই প্রতিবেদনে ফ্রান্সের দুর্নীতি বিরোধী এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার প্রশ্ন তোলা হয়। ফ্রান্সের রাফালে তদন্তের খবর আসতেই কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করেছে ভারতেও যেন যৌথ সংসদীয় কমিটির দ্বারা রাফালে চুক্তির তদন্ত করে।
প্রসঙ্গত– ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ‘রাফালে দুর্নীতি’কে প্রচারের হাতিয়ার করেছিল তখন কংগ্রেসের নিশানায় ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত এপ্রিল মাসে মিডিয়া পার্ট দাবি করে, ২০১৬ সালের ভারত-দাসো চুক্তি কার্যকর করতে গোপনে বহু মিলিয়ন ইউরোর ঘুস দেওয়া হয়েছে এবং কেউ এই ঘুস দিয়েছে ভারতীয় আধিকারিককে। দাসো এই অভিযোগ খণ্ডন করে জানায়, তারা এই চুক্তি কার্যকর করতে কোনও অসৎ উপায় অবলম্বন করেনি, এটি সংস্থার অডিট রিপোর্টেও প্রমাণিত হয়। মিডিয়া পার্টের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর ফ্রান্সের এনজিও শেরপা যারা আর্থিক আপরাধের তদন্ত করার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ– তারা এই চুক্তি নিয়ে সরকারিভাবে অভিযোগ দায়ের করে। তারা অন্যান্য অভিযোগ যেমন চুক্তি বাস্তবায়িত করতে অবৈধ প্রভাব খাটানো থেকে অর্থের বেআইনি লেনদেনরও অভিযোগ করে। এর ফলেই বাধ্য হয়ে ফ্রান্সের সরকার একটি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে অভিযোগের তদন্তের জন্য। শেরপা ২০১৮ সালেই তদন্তের দাবি করেছিল কিন্তু পিএমএফ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। প্রথম অভিযোগে শেরপা জানিয়েছিল, ভারতের রিলায়েন্স গোষ্ঠীকে দাসো কেন অংশীদার হিসাবে বেছে নিল কারণ এই সংস্থা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির স্নেহধন্য। প্রথমে ২০১২ সালে ভারতকে ১২৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য দাসো বরাত পায়। এর জন্য তারা অংশীদার হিসাবে ভারতের অ্যারোস্পেস সংস্থা এইচএএল-এর সঙ্গে আলোচনা করে। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে এইচএএল-এর সঙ্গে যখন দাসোর আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত, তখন সেই বছর এপ্রিল মাসে মোদি ফ্রান্স সফরে যান। তারপরেই এইচএএল-এর সঙ্গে দাসোর আলোচনা ভেস্তে যায় এবং আশ্চর্যজনকভাবে দাসোর সঙ্গে অংশীদারি চুক্তি হয় অনিল আম্বানির রিলায়েন্স গোষ্ঠীর। এইচএএল-কে সরিয়ে অ্যারোনটিকসে অনভিজ্ঞ রিলায়েন্সকে সঙ্গী করে দাসো। এরই মাঝে ২০১৬ সালে তদানীন্তন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কোস হল্যান্ডের অংশীদার জুলিগায়েটের একটি চলচ্চিত্রে অর্থ লগ্নি করে রিলায়েন্স। ফ্রান্সের লে মন্ডে সংবাদপত্র ২০১৫ সালে জানায় যে– রিলায়েন্সের এক ফ্রেঞ্চ সংস্থার নামে ১৪৩.৭ মিলিয়ন ইউরোর কর মামলারû নিষ্পত্তি করা হয় রিলায়েন্সের পক্ষে। ঠিক সেই সময় রাফালে চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পথে।