এস জে আব্বাস: নিষ্ঠা আর অধ্যবসায় থাকলে এভাবেও ফিরে আসা যায়! এবারের মেডিক্যালের নিট এ প্রায় ১৯ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে সর্বভারতীয় ৯০৫ র্যাঙ্ক করে চমকে দিয়েছেন মেধাবী ছাত্র রবিউল ইসলাম। বাড়ি বীরভূমের সিউড়ির সন্নিকট মোনপুর গ্রামে। পিতা রেজাউল করিম উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মা সালমা বেগম গৃহবধূ। জানা গেছে, সে আল্ আমীন মিশনের পাথরচাপুরী শাখা থেকে মাধ্যমিকে ৯২ শতাংশ নম্বর পেয়ে মিশনেরই পাঁচুর শাখা থেকে ২০২০ সালে উচ্চমাধ্যমিক দেয়। সেখান থেকে ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। উল্লেখ্য, গতবারেই নিট পরীক্ষায় তার ভালো ফল করার কথা ছিল। কিন্তু, লক ডাউনে বাড়ি ফিরে এসে মোবাইলে গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিল সে এবং ৪৫ হাজারের বেশি রানক করে একপ্রকার ভেঙে পড়েছিল। আত্মীয় স্বজন ও মিশনের স্যার রা এই মেধাবী ছাত্রকে নানা ভাবে বোঝালে সে নিট প্রস্তুতির জন্য পুনরায় আল্ আমীন মিশনের পাঁচুর ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। সেখানে ক্রমশ নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করে। ফাইনাল পরীক্ষার পর উত্তর মিলিয়ে সে ভালো রেজাল্টের ব্যাপারে ছিল যথেষ্ট আশাবাদী। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮০।
রবিউল তার এইভাবে ফিরে আসার জন্য মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলে, “আব্বা- মা, আত্মীয়-স্বজন সহ মিশনের স্যাররা আমাকে দারুণ ভাবে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এখন আমি আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান এইমস এ ডাক্তারি পড়তে চাই।” তার মতে, “লক্ষ্য ঠিক রেখে যদি নিজের সেরাটা দেওয়া যায়,তাহলে সাফল্য ধরা দিতে বাধ্য। মোবাইল বা ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার যদি আমরা না করতে শিখি, তাহলে অন্যান্য নেশার মতোই মোবাইলও একজন মেধাবী পড়ুয়ার ভবিষ্যৎকেও তছনছ করে দিতে পারে। যেমনটা আমার ক্ষেত্রে ঘটতে চলেছিল। জীবনে হতাশা এলেও নিজের প্রতি কোনো ভাবেই বিশ্বাস হারানো চলবে না। ”
পিতা রেজাউল করিম আনন্দাশ্রু নিয়ে জানান, ” চোখের সামনে ছেলের মেধাকে হারিয়ে যেতে দেখে খুব কষ্ট অনুভব করতাম। এই অভাবনীয় রেজাল্টে আজ সত্যিই খুশি এবং মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।”
পাঁচুর ক্যাম্পাসের দুই অধিকর্তা লুৎফুর রহমান এবং সাবির সরকার জানান,
” আমরা রবিউলের মেধাকে কাছ থেকে অনুভব করতাম। কিন্তু সে তা বুঝতে পারত না। তাই সর্বদায় তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে পড়াশোনার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে অবিরাম চেষ্টা করে গেছি। হারিয়ে যেতে বসা মেধাবী রবিউলের এইভাবে ফিরে আসা অনেককেই পরবর্তিতে অনুপ্রাণিত করবে।”
উল্লেখ্য, এবারে আল্ আমীন মিশনের পাঁচুর শাখা থেকে প্রায় ৬০ জন ছাত্র ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাবে বলে জানা গেছে।