‘কল্যাণীর উপাচার্য কি সংরক্ষণ মেনে নিলেন!’ শীর্ষক শিরোনামে (২২ জুন, ২০২২) পুবের কলম দৈনিক পত্রিকায় যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা শুধুমাত্র কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক মানস কুমার সান্যাল সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। তিনি কখনোই সংরক্ষণ বিরোধী মনোভাব বা সংরক্ষণ নীতির বিপক্ষে নন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কোর্সেই সংরক্ষণ নীতি মেনে ভর্তি করানো হয়। এই কাজে তদারকির জন্য অনুষদীয় ডিনদের নেতৃত্বে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি রয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে সরকারি সংরক্ষণ নীতি মেনেই পিএইচডিতে ভর্তি করা হয়।
কাজেই মাননীয় উপাচার্য সম্পর্কে যে মিথ্যা গল্পের দ্বারা সংরক্ষণ বিরোধী ইমেজ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে, তার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘাত কখনো হয়নি। তাছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এর আগে কিন্তু উপাচার্য অধ্যাপক সান্যাল মহাশয়ের কাছে যাঁরা দরবার করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের সাফ বলে দিয়েছিলেন, তিনি সংরক্ষণ নীতি মানবেন না।’ এ ধরনের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছি।
মাননীয় উপাচার্য মহাশয় কখনোই এমন ধরনের বক্তব্য পেশ করেননি। মাননীয় উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুও এ বিষয়ে মাননীয় উপাচার্যের সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ করেননি। তাছাড়া খবরটিতে বিভিন্ন মনগড়া কথার জাল বুনে যেভাবে মাননীয় উপাচার্যের সংরক্ষণ বিরোধী মনোভাব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত এবং শিক্ষামন্ত্রী মাননীয় ব্রাত্য বসু এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মানস কুমার সান্যাল মহাশয়ের পক্ষে অপমানজনক।
সংরক্ষণ নিয়ম মেনে শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগে পিএইচডিতে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত প্রার্থীর অভাবে কিছু সংরক্ষিত পদ ফাঁকা ছিল। আগামী ২৪ জুন এই ফাঁকা পদগুলি পূরণের জন্য ‘ওয়াক-ইন-ইন্টারভিউ’ হবে। এতে প্রমাণিত হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষণ নীতি মানা হয়েছে এবং এই পদক্ষেপ তারই উদাহরণ।
সুতরাং এই খবর প্রকাশ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সম্পাদক মহাশয়ের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। সবশেষে, আমাদের এই প্রতিবাদপত্রটি এই দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হলে বাধিত হব।
অধ্যাপক সুজয়কুমার মণ্ডল, চেয়ারম্যান, জনসংযোগ বিভাগ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিবেদকের বক্তব্য
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষণ নিয়ে খবরটি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাননীয় উপাচার্যের তরফ থেকে প্রতিবাদপত্র প্রেরণের জন্য জনসংযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুজয়কুমার মণ্ডলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
.
ওবিসি-এ ও এসসিদের সংরক্ষণ হচ্ছে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারি নীতি। এ সম্পর্কে বিধানসভায় আইন পাস হয়েছে।ওবিসি-এ ও এসসি সংরক্ষণ হবে কিনা, সেই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অনুষদীয় ডিনদের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটির নেই। কারণ, ঘোষিত সংরক্ষণ নীতির বাস্তবায়ন ডিনদের মর্জির উপর নির্ভর করে না।
প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, যে বিষয়গুলিতে ২৪ জুন ওবিসি-এ ও এসসি পড়ুয়াদেরদের জন্য ‘ওয়াক ইন ইন্টারভিউ’ করা হল, তা কতদিন পরে করা হল? কেন জেনারেল ক্যাটাগরির সঙ্গেই সংরক্ষণ মেনে ওবিসি-এ ও এসসি পড়ুয়াদেরদের পিএইচডি-র ইন্টারভিউ ও প্রার্থী সিলেকশন করা হল না? কেন প্রায় অর্ধ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর উচ্চশিক্ষা দফতরের কড়া নির্দেশ মেনে নিয়ে ২৪ জুন ‘ওয়াক ইন ইন্টারভিউ’ গ্রহণ করা হল?
আর একটি বিষয়েরও ব্যাখ্যা পেলে ভালো হয়।
আপনাদের লিখিত চিঠি অনুযায়ী,‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কোর্সেই সংরক্ষণ নীতি মেনে ভর্তি করা হয়। এই কাজে তদারকির জন্য অনুষদীয় ডিনদের নেতৃত্বে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি রয়েছে।’ এটা অবশ্যই উত্তম কথা। ডিনদের নেতৃত্বে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি থাকা সত্ত্বেও যখন ওবিসি-এ ও এসসি পড়ুয়াদের সংরক্ষণ মেনে ইন্টারভিউতে সুযোগ দেওয়া হল না, তখন প্রতিবাদ ও প্রশ্নের মুখে মাননীয় উপাচার্য এই বিষয়টি তদন্ত করে সুপারিশ করার জন্য আরও একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন নতুন কমিটি কেন গঠন করলেন? প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সেই কমিটির রিপোর্ট কোথায়?
ওবিসি-এ ও এসসি সংরক্ষণ স্বাভাবিকভাবে মানা হলে এ বিষয়ে আরও একটি নতুন কমিটি গঠনের কী প্রয়োজন ছিল? কী সুপারিশ দেওয়ার জন্য এই কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া ছিল? তাঁরা উপাচার্য মহাশয়কে কী জানাতেন? তাঁরা কি বলতেন, ওবিসি-এ ও এসসি সংরক্ষণ নীতি মেনে এবছরই পিএইচডি-তে ‘এনভার্নমেন্টাল এডুকেশন, এডুকেশন সাইকোলজি, টিচিং স্ট্রাটেজিস’ বিষয়ে প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়ে সিলেকশন করতে হবে? না কি তাঁরা এই সিদ্ধান্ত দেওয়ারও ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন যে, ওবিসি-এ ও এসসিদের সংরক্ষণ অগ্রাহ্য করা হবে এবং তাদের কাউকেই নেওয়া হবে না? এমনকি ইন্টারভিউও গ্রহণ করতে হবে না?
অনুগ্রহ করে জানাবেন কি, কী উদ্দেশে এই কমিটি গঠন করে সাত মাস সময়োক্ষেপ করা হল? এই নয়া কমিটি কী কী বিষয়ে সুপারিশ বা বক্তব্য জানাবার জন্য ভারপ্রাপ্ত ছিল, তা সকলেই জানতে চায়। যদি আপনাদের চিঠির বক্তব্য মতে সংরক্ষণ নীতি মেনেই আপনারা সমস্ত কোর্সে ভর্তি করেন, তাহলে কেন নতুন কমিটি গঠন করে অর্থ ও সময় অপব্যয় করলেন? আপনারদেরকে অনুরোধ, ওই কমিটির রিপোর্ট অনুগ্রহ করে প্রকাশ করুন। তাঁরা রিপোর্ট দিয়েছেন কি? রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য তাঁদের কি কোনও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল? সকলেই কিন্তু জানতে চায়।
যদি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঘোষিত সংরক্ষণ নীতি আপনারা মানবেন, অনুগ্রহ করে বলবেন কি, কেন এতদিন পরে ২৪ জুন আপনারা নতুন করে ‘ওয়াক ইন ইন্টারভিউ’ নিলেন? আপনারা ওবিসি-এ ও এসসি সংরক্ষণ নীতি পরখ করে দেখতে যে নতুন কমিটি করেছিলেন, কেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা এই কমিটির কথা বেমালুম ভুলে গেলেন?
এছাড়া কাউকে অযথা নিশানা করা আমাদের মোটেই উদ্দেশ্য নয়। মাননীয় উপাচার্য মহাশয় একজন উপাচার্য হিসেবে অবশ্যই আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। আমরা শুধু বলতে চেয়েছি, নানা কায়দা-কানুন করে অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে প্রাপ্য থেকে কেন বঞ্চিত করা হবে?
একটি কথা অবশ্য ঠিক, মাননীয় উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু স্বয়ং মাননীয় উপাচার্য মানস কুমার সান্যালের সঙ্গে কথা বলেছেন, এই ধরনের কথা আমরাও লিখিনি। আমরা যা লিখেছিলাম তা হল ‘কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষণ না দেওয়ার বিষয়টি উচ্চশিক্ষা মন্ত্রকের তরফ থেকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়। এই মন্ত্রক এবং দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির সঙ্গে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে উপাচার্য মানস কুমার সান্যালের সংরক্ষণ নিয়ে চিঠিপত্র এবং ভিন্নভাবে কোনও যোগাযোগ হয়নি, এটা যদি মাননীয় উপাচার্য বলেন, তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে পুবের কলম বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পেয়েই এই সম্পর্কে লিখেছে।
আর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা এইসব বিষয়ে খুব বিরল ক্ষেত্রে নিজে সরাসরি কথা বলেন। কারণ, এসব বিষয়ে কথা বলার দায়িত্ব দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ও অন্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের। আর যদি তা নাই হবে তাহলে প্রায় অর্ধ বছর পর কেন মাননীয় উপাচার্য হঠাৎ কয়েকটি বিষয়ে ‘ওয়াক ইন ইন্টারভিউ’-র আয়োজন করলেন, তার পিছনের কারণ জানালে খুশি হব। কারণ, মাননীয় উপাচার্য মহাশয় সংরক্ষণ সম্পর্কে যে বিশেষ কমিটি গঠন করেছিলেন, তাদের রিপোর্টের তো কোনও হদিশ এখনও পর্যন্ত নেই।
এছাড়া যদিও আপনারা চিঠিতে একথা বলে আমাদের সকলেরই খুশির কারণ হয়েছেন যে, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় সবক্ষেত্রে সংরক্ষণের নীতি মেনে চলে। কিন্তু সাধারণ একটি প্রশ্ন, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্স এবং ম্যাথেমেটিক্স পরীক্ষায় সংরক্ষণের কী হল? এই দু’টি বিষয়ে আপনারা সংরক্ষণ দিয়েছেন কি?
যদি না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনাদের সংরক্ষণ সম্পর্কে ঘোষিত নীতির হলটা কি? যতদূর তথ্য রয়েছে যে, এই দু’টি বিষয়ে এসসি এবং ওবিসি-এ পড়ুয়াদের জন্য সংরক্ষণ মানা হয়নি। অবশ্য একটি মোক্ষম হাতিয়ার কিন্তু রয়েছে। আর তা হল ‘এসসি এবং ওবিসি-এ পড়ুয়াদের মধ্যে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি’। এখনও কিন্তু ২৪ জুন যে ‘ওয়াক ইন ইন্টারভিউ’ হয়েছিল তার সফল কিংবা অসফল প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ হয়নি। আর এখনও পর্যন্ত কোনও এসসি বা ওবিসি-এ পড়ুয়া ওই বিষয়গুলিতে পিএইচডি-তে ভর্তিও হয়নি।
আর একটি কথাও পুনরায় বলতে চাই, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যকে কোনওভাবে হেয় করা কখনোই পুবের কলম-এর লক্ষ্য নয়। আমরা শুধু চাই পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে সরকারের যে সংরক্ষণ নীতি রয়েছে, তা যেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়েও পালিত হয়। পিছিয়ে থাকা এসসি এবং ওবিসি-এ পড়ুয়ারা যাতে কোনও মতেই বঞ্চিত না হয়।