এস জে আব্বাস, শক্তিগড়: দশম শ্রেণীর পার্বিক পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ায় অভিমানে সোমবার বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে এক ছাত্র। মৃত ছাত্রের নাম ওসমান গনি চৌধুরী(১৫)। পিতা রাজা চৌধুরী। জানা গেছে, বর্ধমান ২ ব্লকের অন্তর্গত শক্তিগড় সফদার হাসমি হাই স্কুলে পড়া এই ছাত্র টি অনেক দিন ধরেই স্কুলে অনুপস্থিত ছিল। মৃত ছাত্রটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে পরীক্ষায় বসার জন্য বারে বারে অনুরোধ করে । এমনকি, সে অনুপস্থিতির কারণ হিসাবে তাঁর হাত ভাঙার কথা জানায়। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি।
এমনকি, স্কুল প্রধান শিক্ষক তাকে নাকি বকাবকি ও মারধর করে বলে পরিবারের অভিযোগ। এরপরই সে একরাশ অভিমান নিয়ে দুপুরে বাড়ি ফিরে এমন দুর্ঘটনা ঘটায়। বাড়ির লোকজন দুপুরে খাওয়ার জন্য ডাকতে গিয়ে দেখেন ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে তার ঝুলন্ত অবস্থা। তড়িঘড়ি তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক ছাত্রটিকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় শক্তিগড় মাঠপাড়া এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির হঠাৎ চালু করা এই নিয়মের জন্য । এলাকাবাসী অভিভাবকদের অভিযোগ, এই শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই কি এমন কোনো নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, যাতে ছেলেমেয়েরা আগাম সাবধান হতে পারত? তাছাড়া, এটাতো স্কুলেরই আভ্যন্তরীণ পার্বিক পরীক্ষা।
উপযুক্ত কারণ সত্ত্বেও পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হল না কেন? এই কারণে স্কুলের পরীক্ষায় বসতে না দেওয়া নিয়ে সত্যিই কি শিক্ষার অধিকার আইনে কোনো কথা বলা আছে? উপযুক্ত তদন্তে স্কুলের সি সি টি ভি ক্যামেরায় ছাত্রটির প্রতি অমানবিক আচরণের বিষয়টি ধরা পড়তে পারে বলে অভিভাবকদের একাংশের অনুমান। যদিও একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে।
স্থানীয় শক্তিগড় থানার পুলিশ যথারীতি তদন্ত শুরু করেছে। দেহ ময়না তদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। মৃত ছাত্রের বাবা ও মা কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে থেকে দ্রুত ফিরেছেন। মঙ্গলবার দেহ ময়না তদন্তের পর স্কুল গেটের সামনে নিয়ে বিক্ষোভ দেখান পরিবার ও এলাকার মানুষজন সহ অভিভাবকেরা।
তাঁদের দাবি, প্রধান শিক্ষক সহ দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা না হলে তারা দেহ নিয়ে যাবেন না। তাঁদের আক্ষেপ, স্কুল কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত অমানবিকতার কারণে তরতাজা একটি প্রাণ ঝরে গেল। শক্তিগড় থানায় এ বিষয়ে এলাকাবাসীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসের ভিত্তিতে লাশ স্কুল চত্বর থেকে ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি শেখ কামাল হাসান বলেন, ‘ খুবই দুঃখজনক ঘটনা ।
ওসমান গনি আমাদের গ্রামেরই ছেলে ছিল। ওর হাত ভেঙে যাওয়ার কারণে বেশ কিছুদিন স্কুলে যেতে পারেনি বলে শুনেছি। তবে তারজন্য পরীক্ষায় বসতে না দেওয়া টা অন্যায় হয়েছে। তদন্ত হবে। যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।