পুবের কলম প্রতিবেদক: একটু দেরিতে আসলেও শীত পড়তেই যেন নিজের দেরি করে আসার খতিয়ান মিটিয়ে দিতে চাইছে। বেশ খানিকটা জমিয়ে পড়েছে শীত। দিনের বেলা হালকা রোদের আমেজ থাকলেও সঙ্গে থাকছে হিমেল হাওয়া। শীতের এই আমেজ উপভোগ করতে জেলা থেকে শহরের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন চিড়িয়াখানায়।
কেউ জটলা করে মোবাইল হাতে পশুদের সঙ্গে নিজেদের সেলফি তুলতে ব্যস্ত হচ্ছেন, তো কেউ পরিবারের সঙ্গে শীতের রোদ গায়ে মেখে বসে আছেন মাদুর বিছিয়ে। টিফিন বাক্স থেকে বার করে আনছেন মন ভালো করে দেওয়া, জিভে জল আনা খাদ্য সামগ্রী। আবার কেউ কেউ ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর পেট পুরে মধ্যাহ্ন ভোজন করছেন মধ্যগগনে। আর একটু এগোলেই ভিড়ে ঠাসা বাঘের আর সিংহের খাঁচা। রকমারি রঙের সোয়েটার গায়ে কচিকাঁচা থেকে বয়স্করা, বাদ নেই কেউই।
সপরিবারে বছর শেষের আগে ডিসেম্বরের এই শীতের আমেজ উপভোগ করছে আম জনতা। শুধুমাত্র, এরাজ্যের নয়, ভিন রাজ্য থেকেও আলিপুর চিড়িয়াখানা দর্শনে ভিড় জমিয়েছেন অনেকেই। প্রতি বছর শীত পড়তেই চিড়িয়াখানায় আসতে শুরু করে আম জনতা তবে এবছর, ডিসেম্বর মাসে যেন একটু বেশি মাত্রায় ভিড় চোখে পড়ছে চিড়িয়াখানায়। সাধারণত, স্কুলে শীতের ছুটি পড়ে গেলে ভিড় বাড়তে শুরু করে চিড়িয়াখানায় কিন্তু, এবার চিত্রটা একটু আলাদা।
এই প্রসঙ্গে, আলিপুর চিড়িয়াখানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এবার তো দেখছি ডিসেম্বর পড়তেই লোকে-লোকারণ্য। এমনকী, গত রবিবার বিগত বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় রেকর্ড মাত্রায় ভিড় হয়েছে। সাধারণত, ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের পর থেকে এই ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তবে, এবছর দেখা যাচ্ছে শুরু থেকেই মানুষের ভিড় পশুপাখিকে নিয়ে। এটা খুবই আনন্দের বিষয়।
চিড়িয়াখানায় এই অপ্রত্যাশিত ভিড় নিয়ে শুধু চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষই নয়, অবাক কলকাতা পুলিশও। কলকাতা পুলিশের দাবি, মূলত ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ অর্থাৎ বড়দিনের আগের শনি-রবিবার থেকে ভিড় জমতে থাকে চিড়িয়াখানা, ময়দান এলাকায়। তবে, এবার আগেভাগেই ভিড় জমতে শুরু করেছে চিড়িয়াখানায়। পুলিশ সূত্রে খবর, তাই, চলতি সপ্তাহ থেকেই আলিপুর চিড়িয়াখানায় পুলিশি নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে। দুর্গা পুজোর সময় যেমন অষ্টমী-নবমীর ভিড় এড়াতে আগে থেকেই পুজো প্যান্ডেল দর্শনে দর্শনার্থীরা নেমে পড়েন রাস্তায়, ঠিক সেভাবেই বড়দিন, বর্ষ বরণের উৎসবে সামিল হতে চিড়িয়াখানায় ভিড় জমিয়েছে আম জনতা।
হুগলি ব্যান্ডেল থেকে পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে আসা শ্যামলেন্দু রায় যেমন জানিয়েছেন,”শীতের ছুটি পড়ার আগে ভেবেছিলাম ফাঁকায় ফাঁকায় বাচ্চাকে চিড়িয়াখানা থেকে ঘুরিয়ে আনব কিন্তু, এখানে এসে তো দেখছি পুর ভিড়ে ঠাসাঠাসি।”
প্রসঙ্গত, আলিপুর চিড়িয়াখানার দর্শকদের সুবিধার্থে এবং মূলত প্রবীন নাগরিকদের জন্য সম্প্রতি আলিপুর চিড়িখানার অন্দরে ১০টি ১৪ আসনের ব্যাটারি চালিত গাড়ির উদ্বোধন করেছেন রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ওই গাড়িতে চেপেই পশুপাখি দর্শন করতে পারবেন প্রবীনরা। সুযোগ থাকবে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্যও। গত রবিরার দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়ের সাংসদ তহবিল থেকে এই ১০টি ব্যাটারি চালিত গাড়ি দেওয়া হয়েছে চিড়িয়াখানাকে। শুধু তাই নয়, বন্যপ্রাণীদের জন্য দুটো অ্যাম্বুলেন্সও দেওয়া হয়েছে সাংসদের তহবিল থেকে।