পুবের কলম প্রতিবেদক: সাত দফায় বা আট দফায় নয়, এক দফায় ভোট করাতে হবে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দিল তৃণমূল। সোমবার রাজ্যের স্বীকৃত আটটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। ওই বৈঠকেই শাসক দলের তরফে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকসী, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও ব্রায়ান। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরা এদিন ফুল বেঞ্চের সঙ্গে দেখা করে এরাজ্যে এক দফায় নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, এক দিনে নির্বাচন করতে হবে। কেন একদিন কর্বাচন করা হবে না। সাত বা আট দফায় নির্বাচন করা হবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বারবার রাজ্যে আসবে এসে নির্বাচনী প্রচার করবেন তার জন্য? তাহলে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড কি করে হবে? লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে তো সবরকমের রাজনৈতিক বক্তব্য, রাজনৈতিক মন্তব্য করার অধিকার থাকে। তাহলে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এরকম কেন হবে? শুধু নরেন্দ্র মোদিকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য। শুধু অমিত শাহকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য। শুধু বিজেপি নেতাদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য। শুধু ইডি সিবিআইকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য সাতটা ফেজে নির্বাচন হবে।
তৃণমূল সংসদের সাফ বক্তব্য, আপনাদের সুবিধার জন্য আনুন যত পুলিশ ফোর্স লাগবে। দরকার হলে তিনগুণ ফোর্স আনুন কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এক দফায় নির্বাচন হবে। শুধু তাই নয়, তিনি আরো জানান, ইলেকশান কমিশনের কাছে আমরা প্রশ্ন করেছি কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা হবে? গ্রামের মানুষ ভয় পাচ্ছে। গ্রামের মানুষকে হুমকি দিচ্ছে পদ্মে ভীত দেওয়ার জন্য। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করছে শুভেন্দু। কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় যাবে, কি করবে ঠিক করেছে শুভেন্দু। পাশাপাশি, বিচার ব্যবস্থার মধ্যে যদি কেউ থাকে তাকেও নিয়ন্ত্রণ করার বা নজরে রাখার দাবি তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে বলে জানান কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, শুধু এক ভোট নয়, এদিন নির্বাচন কমিশনের কাছে অধার কার্ড বাতিল হওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তৃণমূলের তরফে জানতে চাওয়া হয়েছে, এ রাজ্যের হাজার হাজার মানুষের আধার কার্ড কেন বাতিল হয়েছে? বিজেপি শাসিত রাজ্যে কেন হয়নি?
অন্যদিকে, রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি তরফে এদিন শাসকদল তৃণমূলের তরফে একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের কাছে। এদিন বিজেপির তরফে শিশির বাজোরিয়া, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়রা ফুল বেঞ্চের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, তাঁরা নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের কাছে সুস্থ, শান্তিপূর্ন ভোট করানোর আবেদন জানিয়েছেন। এর জন্য বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে, এখন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পর সেই ব্যাক্তি প্রকৃত ভোটার কিনা তা একবার চেক করা হয়, এবার দুবার দেখা হোক। শুধু তাই নয়, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, এ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর তৃণমূলের শাখা সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তারা শাসকদলের জন্য ডাক হরকরার কাজ করছে। তাই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর থেকে যারা এধরনের কাজ করছে তাদের সরানো হোক। একইসঙ্গে, অতীতে যেসব প্রশাসনিক কর্তাদের নির্বাচন কমিশন সরিয়ে দিয়েছিল তাদের যেন কোনোভাবেই এবারের নির্বাচনের কোনও কাজে ব্যবহার করা না হয়।
তিনি আরো বলেন, গত নির্বাচনে যেমন অজয় নায়েকদের মত অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসারদের এরাজ্যে আনা হয়েছিল বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে, তেমনই অবসরপ্রাপ্ত আইএএস এবং আইপিএস অফিসারদের বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে এরাজ্যে নিয়ে আসা হোক। তাদের নিচে প্রতিটা জোন হিসেবে পাঁচজন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করার দাবি জানানো হয়েছে বলে জানালেন জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি, সতেরো লক্ষ ভুয়ো ভোটারের তালিকার কথাও ফুল বেঞ্চের সামনে তুলে ধরেছে বিজেপি। এই প্রসংগে বিরোধী দলগুলো সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহেরও আবেদন জানিয়েছে বিজেপি।
প্রায় একই অভিযোগ জানিয়েছে বামেরাও। এদিন সিপিআইএমের তরফে উপস্থিত ছিলেন শমীক লাহিড়ী এবং ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়রা। কংগ্রেসের তরফে ফুল বেঞ্চের সঙ্গে বৈঠক শেষে আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে যে পরিস্থিতি হয়েছিল সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন রাজ্যে সুষ্ঠু ও ভয় মুক্ত পরিবেশে ভোট করানোর আবেদন জানিয়েছেন।