পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ ১০ লক্ষ হাজির কণ্ঠে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক’ প্রতিধ্বনিতে মুখরিত হল পবিত্র আরাফাতের পাহাড় ঘেরা ময়দান। এর অর্থ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনও শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ শুক্রবার পবিত্র হজের দ্বিতীয় ও সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিনে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁবুর শহর মিনা থেকে ১০ কিলোমিটার হেঁটে ইসলামের নবী সা.-র স্মৃতিবিজড়িত আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন হাজিরা। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালিত হয় এখানেই।
আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে পারলেই অন্য আনুষ্ঠানিকতা না করলেও হজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যায়।এ বছর ঐতিহাসিক নামিরা মসজিদ থেকে পবিত্র হজের খুতবা দেন শায়খ মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা। এই খুতবা বাংলাসহ ১৪টি ভাষায় অনুবাদ করে সম্প্রচার করা হয়েছে।
এই ময়দানেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। পৃথিবীতে এসে হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.)–এর পুনর্মিলনও হয়েছিল এ ময়দানে। নামিরা মসজিদ থেকে খুতবায় শায়খ মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা বিশ্বের প্রত্যেক মুসলিমের উদ্দেশে বলেন, সর্বদা আল্লাহর দেখানো পথ মেনে চলতে হবে।
তাঁর নিষেধ করা সমস্ত কিছু পরিহার করতে হবে। বলেন, ‘ভালো কিছু করার ইচ্ছা ইসলামি মূল্যবোধকেই তুলে ধরে, এই ভালো মূল্যবোধগুলি একজন মুসলিমকে আরও শুদ্ধ ও নিখুঁত করে তোলে। ইসলামি মূল্যবোধ সর্বদা বিরোধিতা, শত্রুতা ও বিভাজনকে বাদ দিয়ে চলতে শেখায়। এভাবে আমাদের যোগাযোগ ও কথোপকথনে সম্প্রীতি ও সহানুভূতির ছোঁয়া বজায় থাকে।’ নামিরা মসজিদ থেকে দেওয়া খুতবা শোনার পর জোহর ও আসরের নামায একইসঙ্গে আদায় করেন হাজিরা।
এরপর হজ কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া ও পবিত্র কুরআন তিলওয়াতের মাধ্যমে সূর্যাস্তের অপেক্ষা করেন হাজিরা। সূর্যাস্তের পর হাজিরা আরাফাতের ময়দান থেকে রওনা দেন মুযদালিফার দিকে। সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামায একসঙ্গে আদায় করেন হাজিরা। মুযদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে হয় তাঁদের। এরপর জামারায় (প্রতীকী) শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহের পর্ব চলে। এরপর পবিত্র কাবা শরিফে বিদায়ী তাওয়াফ করে হজ পূর্ণ করবেন হাজিরা। হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যারা আগে মদিনায় যাননি তারা মদিনায় যাবেন। সেখানে হাজিরা ৪০ ওয়াক্ত নামায আদায় করবেন। এরপর হাজিদের দেশে ফেরার পালা। ইসলামের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের একটি হল পবিত্র হজ।
শনিবার দিন হাজিদের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হল শয়তানের প্রতি পাথর নিক্ষেপ। এই পাথর নিক্ষেপ প্রতীকি। এর দ্বারা হাজিরা এই শপথ নেন, শয়তান মানুষের শত্রু। তার বিরুদ্ধে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। আর শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে একজন ঈমানদার সবসময় সক্রিয় থাকবেন, সংগ্রাম করবেন।