আহমদ হাসান ইমরান: ২৪-এর রাত এবং ২৫ ডিসেম্বর সারাবিশ্বের খ্রিস্টানরা পবিত্র দিন বলে মনে করেন। বাংলা ও ভারতে একে বলা হয় বড়দিন বা বড়াদিন। বিশ্বজুড়ে খ্রিস্টানরা মনে করেন, যিশু খ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল ফিলিস্তিনের জেরুসালেম সংলগ্ন বেথেলহেম শহরে।
সারাবিশ্ব, বিশেষ করে পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে ধুমধাম করে বড়দিন পালন হলেও যিশুর জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত বেথেলহেম-এ রয়েছে কবরস্থানের নীরবতা। গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলের যুদ্ধ, গণহত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞের প্রভাব পড়েছে বেথেলহেমে। এমনকী বেথেলহেমের এই পবিত্র এলাকাকেও ইসরাইল রেহাই দেয়নি।
এখানেও ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর আক্রমণের ঢেউ এসে পড়েছে। তাই বেথেলহেমে বড়দিনে দেখা যাচ্ছে না কোনও ক্রিসমাস ট্রি, নেই কোনও উৎসাহ, আন¨ের ছবি। অথচ দুনিয়ার খ্রিস্টানদের বিশ্বাস হচ্ছে, বেথেলহেমেই যিশু খ্রিস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বেথেলহেমে বড়দিনের সময় এখানকার লোকেরা বিশেষ করে খ্রিস্টানরা যেমন আনন্দ¨ করেন, তেমনি দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদেরও তাঁরা সেবা প্রদান করেন। খুব ভালো বেচাকেনা হয়। আর সমস্ত হোটেল পরিপূর্ণ থাকে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর কেউই আসছে না। তাই বড়দিনের দিন এবং রাতে বেথেলহেমে কাউকেই তেমন দেখা যাচ্ছে না।
জোয়ে কানাভাটি আলেকজেন্ডার হোটেলের মালিক তাঁর পরিবার এখানে চার প্রজন্ম ধরে হোটেলের ব্যবসা করেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বললেন, আমাদের হোটেলে কোনও অতিথি নেই, নেই একজনও। তিনি আরও বললেন, আমরা যত ক্রিসমাস দেখেছি তার মধ্যে এই ক্রিসমাসটাই সবথেকে ভয়ানক ও বেদনাদায়ক। কল্পনা করতে পারেন? যে ক্রিসমাসে বেথেলহেমে যেন হরতাল চলছে। বন্ধ রয়েছে সবকিছু। কোনও আন¨ নেই, ক্রিসমাস ট্রি নেই, নেই ক্রিসমাসের কোনও চেতনাও। সারাবিশ্ব থেকে তীর্থযাত্রী ও পর্যটকরা ক্রিসমাসের সময় এখানে আসেন। এখানে যে চার্চ অফ নেটিভিটি রয়েছে তাঁরা এখানে উপস্থিত হন।
খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন, এখানেই যিশু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা এই চার্চে দাঁড়িয়ে যিশুকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। কানাভাটি আরও বললেন, ৭ অক্টোবরের আগে ক্রিসমাসের জন্য আমার হোটেলটি পুরোপুরি আগাম বুকিংয়ে পরিপূর্ণ ছিল। তিনি কিছু হোম স্টে-ও অতিথিদের খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি জানান, সমস্ত বুকিং বাতিল করা হয়েছে। বেথেলহেমে খ্রিস্টান অধিবাসীরা অতিথিদের কাছ থেকে আয় এবং কাজ আশা করেন। কিন্তু এবার তার কিছুই হচ্ছে না। কাজেই এক সামগ্রিক বিষাদ বড়দিনে ছেয়ে রয়েছে বেথেলহেমকে। যা শুধু জেরুসালেম নয়, বিশ্বের সমগ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়কেই ব্যথিত করবে।
আর তার উপর সোমবার ইসরাইলি সেনারা আক্রমণ হেনেছে যিশুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশকিছু শহরে। এর মধ্যে রয়েছে নাবলুস, জেরিকো, রামাল্লা এবং সবথেকে বড় কথা পবিত্র শহরাঞ্চল বেথেলহেমে। ফলে বেথেলহেমের মুসলিম আরব ও খ্রিস্টান বাসিন্দারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছেন। চার্চে উপাসনা করার কথা, যিশুর জন্মদিনকে সেলিব্রেট করার কথা কেউই ভাবতেই পারছেন না। তাঁদের কথা, বেথেলহেমে এমন খ্রিস্টমাস কখনই তাঁরা দেখেননি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যিনি নাকি খ্রিস্টান, তিনি এই হত্যা ও ধ্বংসলীলার একজন প্রধান পার্টনার। নিশ্চয়ই তাঁর কিছু ভূ-রাজনৈতির ফায়দা রয়েছে এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে গেলে। বেথেলহেমের বিষয়টি তাঁর মাথায় থাকার কথা নয়। তাই বিশ্বে বড়দিন পালন হলেও বড়দিন হচ্ছে না বেথেলহেমে। এটা নিশ্চয়ই সমগ্র ধর্মীয় ভীরু মানুষের জন্য চরম বেদনার বিষয়।