উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নগর: সুন্দরবনের জঙ্গলে গিয়ে মধু ভাঙতে গিয়ে কিংবা মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের মুখে পড়ে প্রতিবছরই মৃত্যু ঘটে বহু মানুষের। আর তাই এই মৃত্যু মিছিল আটকাতে ও ঘরে বসে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে এবারে এগিয়ে এলো জয়নগর ২ নং ব্লকের নিমপীঠ রামকৃষ্ণ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র।
সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরে, মধু ভেঙে জীবিকা নির্বাহ করেন বহু মানুষ। তবে তাঁদের মাছ ধরার এলাকা নির্দিষ্ট করা রয়েছে। জঙ্গলের গভীরে বা ‘কোর’ এলাকায় মাছ ধরতে বা অন্য কোনও কারণে ঢোকা নিষিদ্ধ। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, বেশি মাছ কাঁকড়ার লোভে অনেক মত্স্যজীবীই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ছেন।
গত কয়েক বছরে ‘কোর’ এলাকায় ঢুকে বাঘের হামলার মুখে পড়ে প্রাণও হারিয়েছেন অনেকে। আর এবার সেই কারণে এগিয়ে এসেছে জয়নগর ২ নং ব্লকের নিমপীঠ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র। নিমপীঠ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানী প্রবীর কুমার গঁড়াই জানান, যেভাবে সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মৌলেরা যায় বিপদ থাকলেও তাদের কিছু করার থাকে না। তাই তাঁরা জীবন হাতে নিয়ে মধু সংগ্রহ করে। বাঘেদের কোর এরিয়ায় ঢুকে পড়ার কারণে প্রচুর মৌলেরা মারা যায় যার কারণে নিমপীঠ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র সুন্দরবনের মৌলেদের নিয়ে নিমপীঠ রামকৃষ্ণ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে প্রশিক্ষন শিবির করে। সেখানে তাদেরকে গভীর জঙ্গলে না গিয়ে ঘরে বসে কিভাবে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ করে, বিক্রি করে ঘরে বসে বেশি টাকা আয় করা যায় সেই তথ্য তুলে ধরলেন নিমপীঠ কৃষি বিজ্ঞানে কেন্দ্রের একাধিক বিজ্ঞানীরা।
এপ্রিল, মে ও জুন এই তিন মাস মধু সংগ্রহ করা হয় সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে যেখানে তাদের বৈধ পাশ দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় যে জঙ্গলের বাঘ থাকে না সেই সমস্ত জঙ্গলে এদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়, বন দপ্তরের নিরাপত্তা দিয়ে সেখানে তাঁরা মৌমাছির বাক্স বসিয়ে গরান গেঁওয়া, বকশি ইত্যাদি গাছে প্রচুর মৌমাছি মৌচাক করার সহায়তা করে। এই তিন মাস সেখান থেকে তাঁরা মধু সংগ্রহ করে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা উপার্জন করে। তাঁরা বাক্স বসিয়ে এই মৌমাছি চাষ করে মধু সংগ্রহ করে। প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা উপার্জন হয়।
তাই বাড়িতে জামরুল থেকে লিচু, পেয়ারা, সরষে সহ বিভিন্ন ফল ও ফুল গাছের কাছে বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করে তাঁরা সেখান থেকে কয়েক হাজার টাকা আয় করতে পারে মাসে মাসে।
আর নিমপীঠ রামকৃষ্ণ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা চান সুন্দরবনের মৌলে সহ মৎস্যজীবিরা জঙ্গলে না গিয়ে এইভাবে বিকল্প কর্মসংস্থানের মধ্যে দিয়ে স্বনির্ভর হোক।