পারিজাত মোল্লা: সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এর এজলাসে জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা মামলায় বড়সড় আইনী স্বস্তি পেলেন বিজেপি বিধায়কেরা। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অভিযুক্ত বিধায়কদের গ্রেপ্তার করতে পারবেনা পুলিশ। লালবাজারের পাঠানো সমনে অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ জারী হাইকোর্টের। আগামী বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে অবশ্যই তদন্তকারী পুলিশ অফিসার কে কেস ডায়েরি আনতে হবে।
প্রসঙ্গত, এদিন কেস ডায়েরি জমা দেয়নি পুলিশ। জাতীয় সংগীতের অবমাননার অভিযোগ তুলে বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে লালবাজারে এফআইআর করেছে তৃণমূল। এবার শাসকদলের সেই অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ বিজেপি বিধায়কেরা। আদালত এই মামলায় বিজেপিকে স্বস্তি দিয়েছে। বিধায়কদের আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রেফতার না করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিধানসভায় জাতীয় সংগীতে অবমাননার মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে বড় ধাক্কা রাজ্যের, স্বস্তি পেলেন বিজেপি বিধায়করা। এখনই এই মামলায় গ্রেফতার না করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ।
বিধানসভায় জাতীয় সংগীতের অবমাননার অভিযোগে ১১ বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে লালবাজার। তাঁদের কয়েকজনকে পুলিশ তলবও করেছে। সেই এফআইআরকে চ্যালেঞ্জ করে এবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বিজেপি বিধায়করা। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে মামলা দায়ের করার আবেদন করেন তাঁরা। সেই আবেদন মেনে মামলা করার অনুমতি দেয় আদালত।’
কোথায় জাতীয় সংগীত বাজছিল? আর কোথায় তখন ওই বিধায়করা ছিলেন? সেসব খতিয়ে না দেখেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে হেনস্তা করতে এই এফআইআর’। এমনটাই আদালতে অভিযোগ করেছেন বিজেপি বিধায়কদের আইনজীবী। তাঁর দাবি, ‘যখন বিধানসভার একদিকে ধরনায় ছিলেন বিজেপি বিধায়করা, তখন বিধানসভার অন্যদিকে শাসকদল তৃণমূল জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করে’। সেই সময় কেনও বিজেপি বিধায়করা উঠে দাঁড়াননি, তাতেই এফআইআর দায়ের হয়। অথচ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী যে কোনওভাবে, যেকোনও জায়গায় জাতীয় সংগীত গাওয়া যায় না।
জানা গিয়েছে, বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশে নতুন করে একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। তার ভিত্তিতে কয়েকজনকে এদিন লালবাজারে তলবও করা হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে প্রকাশ, মোট দু’দফায় বিজেপি বিধায়কদের তলব করা হয়েছে সোমবার। এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘ধরনা আগে থেকেই চলছিল, পরে বিজেপি বিধায়করা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। অর্থাত্ জাতীয় সঙ্গীত শুনেও তাঁরা থামেননি, এমনটা নয়’। এই মামলা থেকে বিধায়করা অব্যাহতি পাবেন কি না? সে ব্যাপারে এখনও কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
মামলাকারীদের আইনজীবী দাবি করেন, ‘অপরাধযোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার ধারাও যুক্ত করা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতারা ওই দিন বিধানসভার গেটের সামনে জমায়েত করেছিলেন। আর জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হচ্ছিল শাসক দলের জমায়েত থেকে। সেক্ষেত্রে কীভাবে জাতীয় সঙ্গীতের অপমান করা হয়েছে?’ সেই প্রশ্ন তুলেছেন মামলাকারীদের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার।তাঁর দাবি, ‘জাতীয় সঙ্গীত শুরু হওয়ার আগে কোনও নোটিসও দেওয়া হয়নি’।
বিচারপতি জয় সেনগুপ্তও এদিন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এটা স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে যে, জাতীয় সঙ্গীত হবে সেটা আগে থেকে ঘোষণা করতে হবে।’ বিচারপতি আরও বলেন, ‘বেলা ৩ টে তখন ধরন চলছিল। এরপর বিরোধীরা যান বিধানসভা। তাঁরা স্লোগান দিতে দিতে ঢোকেন। হঠাত্ গান শুরু হয়ে যায়। জাতীয় সঙ্গীত শুরুর কথা জানানো হয়নি।’ বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘কেউ এই এজলাসে হঠাত্ গান শুরু করলে কী করতে হবে?’
প্রসঙ্গত, গত ২৯ নভেম্বর তৃণমূল এবং বিজেপির জোড়া কর্মসূচি ছিল বিধানসভা চত্বরে। সেদিনই বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননার অভিযোগ ওঠে। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। এবার তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে সমনের উপর অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ জারী করেছে। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অভিযুক্ত বিধায়কদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা অর্থাৎ গ্রেপ্তার করতে পারবেনা পুলিশ। আগামী বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে পুলিশ কে অবশ্যই কেস ডায়েরি জমা দিতে হবে বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এর এজলাস।