ইনামুল হক,বসিরহাটঃ এক পয়সা কেরোসিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে পুলিশের গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া হাই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র নুরুল ইসলামের। দিনটি ছিল ১৯৬৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। সেদিন বামফ্রন্টের মিছিলে হেঁটেছিল এক গরীব পরিবারের সন্তান বারো বছরের নুরুল। মিছিল স্বরূপনগর থানা ঘেরাও করতে আসলে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল নুরুলের। সেই মৃত্যুর প্রতিবাদ রাজ্য উত্তাল হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর ১১ বছর বাদে ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকারের ক্ষমতায় আসে। ৩৪ বছর পরে রাজ্যের পালা বদলের আগে পর্যন্ত বহু আন্দোলনের সাক্ষী এই স্বরূপনগর। বর্তমান সময়ে কেন্দ্রের লাগামছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সেদিনের খাদ্য আন্দোলনের শহিদ নুরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করে প্রতিবাদে সামিল হল স্বরূপনগর তৃণমূল যুব কংগ্রেস।
শনিবার শহিদ নুরুল ইসলামের শহিদ বেদীতে মাল্যদান করে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল। এদিন শহিদ নুরুলের তেঁতুলিয়া হাই স্কুলের সামনে থেকে শহিদ নুরুল ইসলাম মহাবিদ্যালয় পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের অগণিত ছাত্র-যুবক এই মিছিলে পা মেলায়।
উল্লেখ্য, স্বরূপনগর ব্লকের বাংলানী গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বরূপনগর দলদার পাড়া গ্রামের মোল্লা পরিবারের নুরুল ইসলাম পড়ত তেঁতুলিয়া হাই স্কুলে। ১৯৭৭ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি সেই সময় স্থানীয় বামপন্থী নেতারা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মিছিল করেছিল। সেই মিছিলে যোগ দিয়েছিল ১২ বছরের কিশোর নুরুল। এক পয়সার তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নুরুলের। সেই মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদ কর্মসূচি ছড়িয়েছিল। সেই স্মৃতি উস্কে দিয়ে দেশজুড়ে লাগাতার জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে পথে নামল তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের স্বরূপনগর ব্লকের সভাপতি রাজীব মন্ডল, ব্রজ গোপাল বিশ্বাস, তৃণমূলের যুব নেতা সঞ্জীব ঘোষ সহ তৃণমূলের নেতা কর্মী সমর্থকরা গলায় প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে তেঁতুলিয়া হাই স্কুল এর পার্শ্ববর্তী স্থান শহিদ নুরুল ইসলামের বেদীতে মালা, শ্রদ্ধার্ঘ্য স্মৃতিচারণ করে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি করে।
বছর দুই আগে শহিদ নুরুল ইসলামের মা আছিয়া বিবি বার্ধক্য জনিত রোগে মারা যান। আছিয়া বিবি ও তার পরিবারের পাশে আছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নুরুলের দাদা সুরত আলী মোল্লাসহ সেদিনের ঘটনার কথা আজও ছাত্র যুবকদের সামনে তুলে ধরেন।
সুরত আলী মোল্লা বলেন, আমার ভাই এক পয়সা কেরোসিন তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করেছিল বলে পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছিল। আজ দেখতে পাচ্ছি দেশজুড়ে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সবাই শামিল হচ্ছে। শহিদ নুরুলের পরিবারও চায়, জ্বালানির দাম কমাক। খুব তাড়াতাড়ি গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেলের দাম না কমালে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ গিয়ে কোথায় গিয়ে পড়বে তা বলা যাচ্ছে না।