মোল্লা জসিমউদ্দিন: কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সিঙ্গেল বেঞ্চের সিবিআই তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। তবে লিখিত নয় মৌখিকভাবে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি রয়েছে।
মেডিকেলে নিট পরীক্ষায় ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র অনিয়ম অভিযোগের তদন্ত করতে সিবিআইকেই দায়িত্ব দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন সেই হুঁশিয়ারি এর আগেই এজলাসে বসে তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আদালত মনে করে করলে স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেবে। বুধবার সেই নির্দেশই দেন বিচারপতি।
মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে অনিয়ম ঘটেছে বলে মামলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। অভিযোগ, মেডিক্যাল নিটে ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র দেখিয়ে কিছু ছাত্রছাত্রী সংরক্ষিত কোটায় সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। এই জাতিগত শংসাপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন পশ্চিম বর্ধমানের ইতশা সরেন। ২০২৩ সালের নিট দিয়ে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ইতশা। প্রায় ২৭ জনের নামে ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র দেখিয়ে সরকারি মেডিক্যাল কলেজের আসন দখলের অভিযোগ করেছিলেন তিনি। যার ফলে যোগ্য প্রার্থী হয়েও তিনি বঞ্চিত হন বলে ইতশার দাবি। এই মামলায় সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এর আগে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ”সিনহা, ভৌমিক, মণ্ডল, বড়ুয়া এঁরা কি সত্যি সংরক্ষিত কোটায় পড়েন?” তা ছাড়া অভিযুক্ত ছাত্রছাত্রীদের নাম ও ঠিকানা এবং জাতিগত শংসাপত্র হলফনামা আকারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। সেই সঙ্গে মেডিক্যাল এডুকেশন বোর্ডের ডিরেক্টরকে ডেকে পাঠিয়ে বিচারপতির প্রশ্ন করেছিলেন, ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে অভিযোগ ভিত্তিহীন হতেই পারে, কিন্তু সেই অভিযোগের কেন তদন্ত করল না বোর্ড।বিভিন্ন পক্ষের হলফনামা পাওয়ার পর আদালত মনে করেছেন অভিযোগের ভিত্তি রয়েছে। তাই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগ, ‘তফসিলি উপজাতি না হওয়া সত্ত্বেও অনেক পড়ুয়া ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ওই সরকারি কলেজের তালিকায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে’। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন জানিয়ে দেন, ‘এইসব দুর্নীতির তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশের উপর আদালত আর কোনওভাবেই আস্থা রাখতে পারছে না। এরফলে মেডিক্যালে নিট পরীক্ষায় ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র মামলায় সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হচ্ছে’। আর্থিক কোনও দুর্নীতি হয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন বিচারপতি।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরই সরব হন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল। পাল্টা তাঁকে থামিয়ে বিচারপতি জানতে চান, ‘সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে কি গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ’? বিচারপতি বলেন, ‘রাজ্যটা দিনে দিনে কয়েক জন দুর্নীতিগ্রস্তের আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। অথচ এত কিছুর পরেও পুলিশের তরফে কোনও সদর্থক ভূমিকা চোখে পড়ছে না। এ রাজ্যের পুলিশ কর্তৃপক্ষের উপর তাই এই আদালতের কোনও আস্থা নেই।’
কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজ্য। মৌখিক ভাবে করা সেই আবেদন শুনে মৌখিক ভাবেই স্থগিতাদেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি সৌমেন সেন এবং উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে মৌখিক আর্জি জানান রাজ্যের এজি। সেই আর্জি শোনার পরেই মেডিক্যাল কলেজ মামলায় দেওয়া বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে এই স্থগিতাদেশ কার্যকর হবে কি না? সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আগামীকাল। মেডিক্যাল কলেজ সংক্রান্ত মামলায় বিচরপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্যের মামলাটি বৃহস্পতিবারই শুনানি হবে ডিভিশন বেঞ্চে।
আদালতে যে ২৭ জনের নাম জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের শংসাপত্র খতিয়ে দেখতে বলেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গত ১৬ অক্টোবর ওই ২৭ জনকে মামলায় যুক্ত করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি রাজ্যের স্ক্রুটিনি কমিটিকে বলেছিলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এই খতিয়ে দেখার কাজ সম্পন্ন করতে বলেছিলেন বিচারপতি। গত ১৪ ডিসেম্বরে রাজ্য জানায়, এমন ১৪ জন প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, যাঁরা ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করেছিলেন। বিচারপতি দু’সপ্তাহের মধ্যেই তাঁদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করে তদন্ত শুরু করতেও বলেছিলেন বিচারপতি। বুধবার এই মামলাতেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।সেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশে ডিভিশন বেঞ্চ মৌখিকভাবে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি রয়েছে ডিভিশন বেঞ্চে।