পুবের কলম প্রতিবেদকঃ কেন্দ্রীয় সরকার পিছিয়ে পড়া শ্রেণি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রদের স্কলারশিপ বৃত্তি বন্ধ করে দিয়েছে। কুছ পরোয়া নেহি। এই ছাত্রদের শিক্ষা আমরা বিপন্ন হতে দেব না, আমরা তাদের শিক্ষার জন্য বৃত্তি দেব, আলিপুরদুয়ারে এক প্রশাসনিক সমীক্ষা বৈঠকে বৃহস্পতিবার ফের অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দুস্থ ছাত্রদের আশ্বস্ত করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পিছিয়ে পড়া শ্রেণি এবং সংখ্যালঘু ছাত্রদের জন্য ‘মেধাশ্রী’ স্কলারশিপ দেওয়ার ঘোষণা করে মমতা বলেন, তাঁর সরকার এই সব দুস্থ ছাত্রদের স্বার্থরক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। ‘মেধাশ্রী’ স্কলারশিপের অন্তর্গত পশ্চাদপদ শ্রেণি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্ররা ৮০০ টাকা করে অনুদান পাবেন। বৈঠক চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবার ওবিসি এবং সংখ্যালঘু ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, কিন্তু আমরা তাদের সেই অনুদান দেব। আমরা শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রীর মতো কল্যাণমূলক প্রকল্প নিজেদের টাকায় চালাচ্ছি।
তাহলে ওবিসি ও সংখ্যালঘু ছাত্রদেরও আমরা ‘মেধাশ্রী’ বৃত্তি দিতে পারবো। যদি দিল্লি টাকা না দেয়, তাহলে আমরা দেব। দিল্লি এখান থেকে টাকা তুলে নিয়ে যায় অথচ দুস্থ ছাত্রদের বৃত্তি দেওয়ার ব্যাপারে ওদের এত অনীহা। মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে যে বৃত্তি প্রত্যাহারের দিকে ইঙ্গিত করেছেন সেটি মোদি সরকার গতবছর নভেম্বর মাসে তুলে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাক মাধ্যমিক স্কলারশিপ প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছিল নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে।
প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রদের এই স্কলারশিপ দিত কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রক। এই বৃত্তি দেওয়া হত এসসি, এসটি, ওবিসি এবং সংখ্যালঘু ছাত্রদের।
পাশাপাশি মোদি সরকার গতবছর ডিসেম্বর মাসে সংখ্যালঘু ছাত্রদের উচ্চশিক্ষার জন্য এতদিন যে মৌলানা আজাদ স্কলারশিপ দেওয়া হত, সেটিও প্রত্যাহার করে নিয়েছে মোদি সরকার।
এই স্কলারশিপও দেওয়া হত কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রকের মাধ্যমে। মমতা এ দিন বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বিভাজিত করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু আমি সবার কাছে অনুরোধ করব আপনারা বিভেদমূলক কথায় আদৌ কান দেবেন না। মানুষকে বিভাজিত করতে তারা, বিজেপি, বহুরকম কথা বলছে, ভবিষ্যতেও বলবে। কিন্তু আমাদের সমাজকে আমাদের বাংলাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মমতা এ দিন ফের একবার রাজ্যের বকেয়া টাকার প্রসঙ্গও তুলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান।
তিনি বলেন, তিনবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি, আমাদের প্রাপ্য টাকার কথা বলেছি। ওরা কী ভাবে, আমরা কি ভিক্ষা চাইছি। আমরা ভিক্ষা চাইব না। কতদিন এভাবে চলে দেখছি তারপর বুঝে নেব। একশো দিনের কাজের মজুরি বাকি রয়েছে। বাংলা এই বাবদ কেন্দ্রের কাছে ৬০০০ কোটি টাকা পায়।
প্রসঙ্গত, এসসি, এসটি এবং উপজাতি শ্রেণির মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ বাড়াতে মমতা চালু করেছিলেন শিক্ষাশ্রী প্রকল্প। এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর শিক্ষার মূলস্রোতে অনেকটাই ফিরিয়ে আনা গেছে উক্ত সম্প্রদায়গুলির মেয়েদের। এদের স্কুলের প্রাথমিক খরচ বহন করে স্কুল। সমাজের নিম্নবর্গের যারা এতদিন অবহেলিত ছিল, যারা শিক্ষা থেকে যোজন মাইল দূরে সরে ছিল তাদের, অনেককেই শিক্ষার অঙ্গনে টেনে আনতে সফল হয়েছে এই প্রকল্প। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ওবিসি এবং সংখ্যালঘু ছাত্রদের জন্য শুরু করলেন ‘মেধাশ্রী’। তৃণমূলের সরকারের এটি একটি বড় পদক্ষেপ।