ইনামুল হক, বসিরহাট: উত্তর ২৪ পরগনার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রত্যন্ত স্বরূপনগর এলাকা থেকে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে মালঙ্গপাড়া কেসিবি ইন্সটিটিউশন( উ.মা.) এর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অনন্যা মণ্ডল। প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৭ ফল প্রকাশের পরপরই রাজ্যের সম্ভাব্য প্রথম অনন্যা মণ্ডল এর বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পত্র ও ফুল, মিষ্টি নিয়ে হাজির হন স্বরূপনগরের বিডিও কৃষ্ণ গোপাল ধাড়া। সঙ্গে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঙ্গীতা কর, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ রাজীব মন্ডল, বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ রমেন সরদার প্রমূখরা। তাকে শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত হন বেঙ্গল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের রাজ্য সম্পাদক শাজাহান মন্ডল আমিনুল ইসলামরাও।
অনন্যা মণ্ডল এর স্বপ্ন চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র মানুষের সেবায় হাসপাতাল গড়া। বিনা পয়সায় গরিব মানুষের চিকিৎসা করবে এই ব্রত নিয়ে পেশায় আইনজীবী বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা অনন্যা মণ্ডল তার সাফল্যের লক্ষ্যে অবিচল। কন্যার সাফল্যের পিছনে মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য, জানালেন পেশায় আইনজীবী বাবা মোশারফ মন্ডল। মা আহ্নিকা মন্ডল নিজের পেশার মধ্যে থেকেও একমাত্র সন্তানের জন্য সময় বার করে পাশে থেকেছেন বরাবর। স্বরূপনগর বিডিও অফিসপাড়ার বাসিন্দা ছোট্ট অনন্যা শাঁড়াপুল আনন্দ মার্গ স্কুল থেকে স্বরূপনগর মাঝের পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলাফলে বরাবরই প্রথম ছিল। হাই স্কুলেও সবসময়ই শীর্ষে থেকেছে সে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এবছর মাধ্যমিকে উজ্জ্বল সাফল্যের প্রত্যাশা ছিল তার পরিবারের সকলের। পরীক্ষা না হওয়ায় মনে খেদ থাকলেও অনন্যার পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কোন কোনো খামতি ছিলনা। তার মতে পরীক্ষা হোক বা না হোক পাঠ্যবিষয়ের জ্ঞান তো অর্জন করতেই হবে। না হলে পরবর্তী উচ্চশিক্ষায় প্রবল অসুবিধা হতে পারে। তাই প্যানডেমিক আবহে পুরো সময়টাই সে বাড়িতে বসেই পড়াশুনার কাজে লাগিয়েছে। বাবা-মা থেকে স্কুলের শিক্ষক, গৃহশিক্ষক সকলেই সব সময় সেই উৎসাহ দিয়ে গেছেন। অনন্যা জানায়, কোভিড পরিস্থিতিতে যখন যে শিক্ষকের সাহায্য চেয়েছি পেয়েছি সকলের। পড়াশুনার ফাঁকে নাচ ও আঁকা তার প্রিয় বিষয়। অনন্যা আশাবাদী, একদিন সব স্বাভাবিক হবে। পরীক্ষা হবে এটা ধরে নিয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। বইগুলি খুঁটিয়ে পড়তে হবে, তার পরামর্শ পরবর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য। মালঙ্গপাড়া কেসিবি ইনস্টিটিউশন এর প্রধান শিক্ষক প্রণব চক্রবর্তী জানান, অনন্যার উজ্জ্বল সাফল্যের পাশাপাশি আমাদের বিদ্যালয়ের আরো ৩ জন শিক্ষার্থী যথাক্রমে রীতেশ তরফদার (৬৯৪), জ্যোতির্ময় মন্ডল(৬৯১), সুমাইয়া গাজী (৬৮৮) রাজ্যের সম্ভাব্য মেধাতালিকায় প্রথম দশ জনের মধ্যে স্থান পেয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। ১৫ জন ৬৭৫ বা তার বেশি পেয়েছে। এরা সকলেই আমাদের গর্ব। আগামী প্রজন্মের কাছে আশার জায়গা তৈরি করল এই কৃতিরা। সকলকে অভিনন্দন। এই সাফল্যের জন্য আমাদের শিক্ষকদের ও অভিভাবকদের ভূমিকার প্রশংসা করতেই হয়। কারণ কোভিড পরিস্থিতি শুরু হতেই আমরা অনলাইনে ক্লাস শুরু করি। মোবাইল, নেটওয়ার্কের সমস্যা থাকলেও অভিভাবকরা যতটা সম্ভব পরিস্থিতি সামলেছে। কারণ সন্তানের শিক্ষা থেমে থাকতে পারে না। এই ভেবে সকলে মিলেই লড়াইটা চালিয়ে যাওয়ায় আমাদের এই সাফল্য এসেছে বলে মনে করি।