উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,কুলতলি : এত বছরেও একটা জেটি ঘাট হলো না সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম নগেনাবাদে। প্রশাসনিক মহলে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। সুন্দরবনের কুলতলি বিধানসভার মৈপীঠের প্রত্যন্ত গ্রাম নগেনাবাদ। সেখানে কয়েক হাজার মৎস্যজীবীর বাস। নদীতে মাছ-কাঁকড়া ধরে পেট চালান তাঁরা। মাছ ধরতে গিয়ে প্রায়শই বাঘের হামলার মুখে পড়েন। অনেকের প্রাণও যায়। নদীতে যাতায়াতের জন্য দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষ দাবি জানিয়ে আসছে একটি জেটি ঘাটের।
সারা বছর যেমন কাঁদা ঘেঁটে নৌকায় উঠে তাঁরা নদীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে যায় মাছ কাঁকড়া ধরতে তেমনি প্রতিবছর বৈশাখ মাসের শেষ মঙ্গলবার নগেদাবাদের জেটি বিহীন ঘাট থেকে কাঁদা মেখে নদীতে করে ৪৫ মিনিট অতিক্রম করে আজমমালির জঙ্গলে জঙ্গল পুজো বা বনবিবির পুজো দেখতে যায় লক্ষাধিক মানুষ।আর তাই পাকা জেটি ঘাটের দাবি তুললো স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষজন। বাঘের দেবতা হলেন বনবিবি। সুন্দরবনের বাসিন্দারা মনে করেন বনবিবি তাঁদের বাঘের হাত থেকে রক্ষা করেন। তাই সুন্দরবনে এই দেবীর পুজো হয় ঘটা করে।আর গত ৬৫ বছর ধরে বনবিবির পুজো হয়ে আসছে মৈপীঠের নগেনাবাদে।
এখানে বনবিবির সঙ্গে পুজো হয় নারায়ণ, বিশালাক্ষী, গঙ্গা ও গাজী বাবারও। বৈশাখ মাসের শেষ দিন এ পুজো হয় মাকরি নদীর পাড়ে আজমলমারি জঙ্গলে টিনের ছাউনি দেওয়া দরমার মন্দিরে। এখানে প্রতি পদে বাঘের ভয়। বিপদ আসতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। তবু পুজো দেন মানুষ। অনেকের কাছে এই জঙ্গল বৈঠাভাঙি নামেও পরিচিত। সেখানে পৌঁছতে ৪৫ মিনিট নৌকায় চেপে নদীপথে যেতে হয়। তারপর হাঁটাপথে আরও কয়েক কিলোমিটার কাদাপথ। তবেই মেলে মন্দির। মানুষের ক্ষোভ, এখানে কোনও জেটি ঘাট নেই। প্রচুর মহিলারাও আসেন। জেটি না থাকায় সমস্যা পড়ে সবাই।
কলকাতা থেকে আগত কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন,সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বনবিবির পুজো দেখতে লক্ষাধিক মানুষ আসে,তাছাড়া এখানকার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে সেখানে এত বছরে মানুষের নূন্যতম প্রয়োজনের জেটি ঘাট তৈরি করে দিতে পারলো না প্রশাসন।স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমরা বহু বার পঞ্চায়েতকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। আর এই এলাকায় দ্রুত জেটি ঘাট তৈরির দাবিতে আন্দোলনের পথে নামছে এপিডিআর নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন। তাঁরা সারা বছরই সুন্দরবনের মানুষের পাশে থেকে কাজ করে।এব্যাপারে এপিডিআরের জেলা কমিটির সহ সম্পাদক মিঠুন মন্ডল বলেন,সুন্দরবনের এই সব এলাকার মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থান নেই। তাঁরা নদীতে মাছ কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে।আর নদী পথই তাদের জীবিকার মূল মাধ্যম।আর দীর্ঘ দিন এই নগেনাবাদের এই এলাকায় কোনো জেটি ঘাট নেই।
তাই এই এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা দ্রুত জেটিঘাটের দাবিতে প্রশাসনের কাছে দরবার করবো।আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত এই জেটি ঘাট টি তৈরি করে দিক।এব্যাপারে স্থানীয় মৈপীঠ বৈকুন্ঠপুর গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান জোসনা মন্ডল কোনো মন্তব্য করতে চায় নি। তবে এব্যাপারে কুলতলির বিডিও সুচন্দন বৈদ্য বলেন,আমরা সাধারণ মানুষের সমস্যার খবর পেয়েছি।তবে বর্তমানে নির্বাচন বিধি চালু আছে।নির্বাচন মিটতেই ওই এলাকায় নতুন জেটি ঘাট নির্মানের ব্যবস্থা করা হবে।