পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক– ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়ামাতা লাকা ওয়াল মুল্ক– লা শারিকা লাকা’। এই ধ্বনিতেই সোমবার সারাদিন মুখরিত ছিল আরাফাতের ময়দান। সউদি আরবে থাকা ১৫০টি দেশের নাগরিকসহ এবার হজের মূলপর্ব পালন করেছেন ভাগ্যবান ৬০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। সউদি আরবে থাকা ৫ লক্ষ ৫৮ হাজার মানুষ হজের জন্য আবেদন করেন। তাদের মধ্য থেকে ৬০ হাজার বেছে নেওয়া হয়। আরাফাত ময়দানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. বিদায় হজে মুসলিম জাতির উদ্দেশে নির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া মুসলিমদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.) এবং মা হাওয়ার স্মৃতি বিজড়িত মিলনস্থলও এই আরাফাত ময়দান। হযরত মুহাম্মদ সা. বলেছিলেন– আরাফাত ময়দানে অবস্থান মানে হজ। যে মুসলমান মুজদালিফায় রাত্রিযাপন করে ফযরের নামাযের পূর্বে আরাফাতের ময়দানে পৌঁছবে তার হজ পূর্ণ হয়ে যাবে।
সোমবার ধবধবে সাদা দুই টুকরো কাপড় পরে ইহরাম বেঁধে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের আশায় সূর্যোদয়ের পরই হজযাত্রীরা মীনা থেকে রওনা হন আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে। হজের তিন ফরজের মধ্যে ৯ যিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। হজযাত্রীরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পবিত্র এই স্থানে অবস্থান করেন। কেউ জাবাল-আল-রাহমা নামে প্রসিদ্ধ ২৩০ ফুট উঁচু পাহাড়ের পাশে– আবার কেউ ইবাদত করেন ও কুরআন পাঠ করেন সুবিধাজনক জায়গায় বসে। আরাফাত ময়দানে মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা পাঠ করেন কাবা শরীফের ইমাম ও খতিব। বাংলা ভাষাসহ ১০টি ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করে প্রচার করা হয়। খুতবা শেষে হজযাত্রীরা জোহর ও আসরের নামায একসঙ্গে আদায় করেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহর জিকিরআসকার ও কুরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। এরপর হজযাত্রীরা মুজদালিফার দিকে অগ্রসর হন। মাগরিব ও এশার নামায আদায় করে সেখানেই রাতযাপন করবেন তাঁরা। মুজদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করে তারা আবারও মীনায় ফিরবেন। ১০ যিলহজ্ব অর্থাৎ আজ মঙ্গলবার মীনায় পৌঁছনোর পর হজযাত্রীরা পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করবেন। প্রথমে মীনাকে ডানদিকে রেখে দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। এরপর দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কুরবানি করা। তৃতীয় পর্বে মাথা মুণ্ডন করতে হবে। আর চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত করা। এরপর সাফা মারওয়া সাঈ করে আবারও মীনার তাঁবুতে ফিরবেন হাজীরা। পরের দুই দিনও মীনা থেকে জামারায় পাথর নিক্ষেপের আনুষ্ঠানিকতা চলবে। এরপর হাজীরা মীনার তাঁবু ত্যাগ করে মক্কায় ফিরে বিদায়ী তাওয়াফে অংশ নিয়ে হজের সমাপ্তি ঘটাবেন। গত শনিবার থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। গতবারের মতো এবারও সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হজ পালিত হচ্ছে।
সউদিতে অবস্থানকারী এক মিশরীয় নাগরিক সালমা মুহাম্মদ হেগাজি জানালেন, আল্লাহর আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন এই পবিত্র স্থানে অবস্থান করার। আমার সারা শরীর এখন কাঁপছে– আমার মনে হয়েছে রহমাতুল্লিল আল-আমীন ও পরম করুণাময় আল্লাহ্ আমাকে মাফ করে দিয়েছেন।
এখানে আসার জন্য ২০ জনের এক একটি দল তৈরি করা হয়েছে– যাতে কেউ কাছাকাছি হতে না পারেন। ৫৮ বছরের সউদি নাগরিক বারেফ সিরাজ এএফপির সাংবাদিককে জানালেন, এই ক্ষমার পর্বতের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব এই সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আমি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হব না আশা করি।