রাবিয়া বেগম, বহরমপুরঃ এই প্রথম উচ্চ মাধ্যমিকের কোনও কৃতী ছাত্রীকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’র ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হল। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছেন মুর্শিদাবাদের কান্দির মেয়ে রুমানা সুলতানা। তাঁর এই সাফল্যকে স্বীকৃতি দিতেই রাজ্যের মেয়েদের জন্য মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্বপ্নের প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়েছে।
আগামী দিনে ‘কন্যাশ্রী’র প্রচার পুস্তিকায় ছবি থাকবে রুমানার। তাঁর সাফল্য দেখতে প্রেরণা পাবেন পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীরা।
উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে প্রথম স্থান পাওয়া কান্দির রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমানা সুলতানার এই সাফল্য এবং কন্যাশ্রীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার খবরে আপ্লুত মুর্শিদাবাদ সহ রাজ্যবাসী।
গ্রামের মেয়েরা যাতে শিক্ষায় এগিয়ে আসতে পারে সেই জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করে রাজ্য সরকার। মু্যূমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্বপ্নের প্রকল্প আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রশংসিত হয়েছে।
শুক্রবার রাজ্য সরকারের পক্ষে মুর্শিদাবাদ জেলাশাসক শারদ কুমার দ্বিবেদী সংবর্ধনা দেন রুমানা সুলতানকে। তারপরই জেলাশাসক ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার কথা জানান। এই প্রস্তাব পেয়ে অভিভূত রুমানা সুলতানা।
ভরতপুর থানার গয়সাবাদ অচলা বিদ্যাপীঠ স্কুলের প্রধানশিক্ষক রবিউল আসলম রুমানা সুলতানার আব্বা। এই স্কুলের ইংরেজির সহ শিক্ষক সুলতানা পারভিন রুমানার মা। আর কোন ভাই-বোন নেই রুমানার। শিক্ষক-শিক্ষিকা আব্বা-মায়ের একমাত্র সন্তান রুমানা সুলতানা ২০১৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে পঞ্চম স্থান পেয়েছিলেন। তখন রুমানা সুলতানার আফসোস ছিল– প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান না পাওয়ায়। এবার উচ্চমাধ্যমিকের ফলে পুষিয়ে দিয়ে একেবারে প্রথম স্থান দখল করেছেন এককভাবে। এতে খুশি রুমানার পরিবার ও স্থানীয়রা। খুশি মুর্শিদাবাদের মতো পিছিয়ে পড়া জেলার ৮০ লক্ষ মানুষ। মুর্শিদাবাদ তথা রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষরাও রুমানার সাফল্যে খুশি।
এই প্রথম উচ্চমাধ্যমিকে কোনও মুসলিম ছাত্র বা ছাত্রী প্রথমস্থান দখল করেছে। তাও আবার এককভাবে ৪৯৯ নম্বর নিয়ে। সকলে ভীষণভাবে খুশি হলেও রুমানা সুলতানা কিন্তু এই প্রথমস্থানে সম্পূর্ণ খুশি হতে পারেননি।
রুমানা সুলতানা বললেন, প্রথমস্থান পেয়ে ভাল লাগছে। তবে পরীক্ষা দিয়ে, পরীক্ষার রেজাল্টে প্রথমস্থান দখল করলে বেশি ভাল হত। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাই ভালো। দু’বছর আগে মাধ্যমিকে খুব ভালো পরীক্ষা নিয়ে আশা করেছিলাম প্রথমস্থান থেকে তৃতীয়স্থানে জায়গা করে নিতে পারব। কিন্তু পারিনি। পঞ্চমস্থান পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল মাধ্যমিকে। এবার পরীক্ষা না দিয়েই প্রথম। তবে এগারো ক্লাসের পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছিল। তাই পরীক্ষা বাতিলের পর যখন জানতে পারি মাধ্যমিক ও এগারো ক্লাসের রেজাল্ট– সেইসঙ্গে স্কুলের প্রোজেক্ট নম্বর নিয়ে ফলাফল বের হবে তখন আশা করেছিলাম ভালো ফল হবে। এগারো ক্লাসের পরীক্ষাও খুব ভালো হয়েছিল। সংসদ যে পদ্ধতিতে সকলকে রেজাল্ট দিয়েছে আমাকেও সেভাবে দেওয়া হয়েছে। বেশি হতাশ হয়েছিলাম পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা হওয়ায়। পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের থেকে তিনমাস বেশি সময় পেয়েছিলাম। সিলেবাস কমেছিল। ফলে প্রস্তুতি খুব ভালোভাবে হওয়ার পর পরীক্ষা দিতে না পারা অবশ্যই খারাপ লেগেছিল। ভবিষ্যতে রুমানা তার প্রিয় বিষয় জীবনবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে বিজ্ঞানী হতে চায়। আবার নিট এ ভালো রেজাল্ট করে ভালো কোনও মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পেলে চিকিৎসকও হতে পারে বলে জানিয়েছেন রুমানা।
এ দিন রুমানার আব্বা রবিউল আলম বলেন– মেয়ের ভবিষ্যৎ মেয়ে নিজেই বেছে নেবে। আমরা চাপিয়ে দিই না। সকালে বহরমপুরে জেলাশাসক নিজে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রুমানাকে সংবর্ধনা দেন। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসকের থেকেই রুমানা জানতে পারেন তাঁকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়েছে। এই খবরে খুবই সম্মানিত হয়েছি বলে জানিয়েছেন রুমানা।
মুর্শিদাবাদ জেলাশাসক জানিয়েছেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে রুমানা সুলতানাকে সংবর্ধনা দিয়েছি। রুমানা মুর্শিদাবাদের নাম উজ্জ্বল করেছে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হচ্ছে রুমানা সুলতানাকে। রুমানাকে দেখে জেলা তথা রাজ্যের ছাত্রীরা উৎসাহিত হবে, এই আশা করছি।