পুবের কলম প্রতিবেদকঃ ম্যালেরিয়া রোগের হাত থেকে কলকাতা শহরের বাসিন্দাদের রক্ষা করতে এবার চিনের পন্থা অনুসরণ করলো কলকাতা পুরসভা।জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত যে সব এলাকা জুড়ে মশার উৎপাত বেশি,ওই সব এলাকায় বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ মেশানো মশারি বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এবং কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ উদ্যোগে কলকাতার ম্যালেরিয়া অধ্যুশিত এলাকায় ওই বিশেষ মশারি বিতরণ করা হবে।
জানা গিয়েছে, রাসায়নিক পদার্থ মেশানো বিশেষ এই মশারির নাম ‘লংলাস্টিং ইনসেক্টিসাইডাল ট্রিটেড মসকিউটো নেট’। বিশেষ ধরণের এই ‘এলএলআইএন’ মশারি ব্যবহার করেই গত ২০২১ সালে চিন দেশ ম্যালেরিয়ার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করেছিল। এই মশারির উপর মশা বসার পর মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যেই মশার মৃত্যু হবে। চিনের পাশাপাশি মশা খেকো এই বিশেষ মশারি ব্যবহার করে শ্রীলঙ্কাও ম্যালেরিয়ার মোকাবেলা করে সাফল্য অর্জন করেছে। কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, শহরের বস্তি এলাকা, ফুটপাথবাসীদের পাশাপাশি নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের এই বিশেষ মশারি দেওয়া হবে। কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে মঙ্গলবার থেকেই এই মশারি বিতরণের কাজ শুরু হয়েছে। শহরে মোট ত্রিশ হাজার মশারি বিতরণ করা হবে।ইতিমধ্যেই কলকাতায় প্রায় ছয় হাজার মশারি এসে পৌছেছে।
এ ব্যাপারে কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানান, বিশেষ ধরণের এই মশারির জাল ১০০ শতাংশ পলিয়েস্টার সুতোয় তৈরি। আর এই মশারির সুতোর মধ্যেই মেশানো আছে ডেল্টামেথ্রিন নামের রাসায়নিক। তাই মশারির জালে মশা একবার বসলেই মশার পক্ষে আর উড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মশারির জালে লাগানো ডেল্টামেথ্রিন নামক রাসায়নিক পদার্থ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কার্যকরী থাকে। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস আরও জানান, সাধারণত ঘরে ঢোকার পর মশা প্রথমে মশারির উপরেই বসে। তারপর মশারিতে ঢুকতে না পেরে অন্যত্র উড়ে যায়। কিন্তু রাসায়নিক মেশানো এই মশারিতে বসার পর আর কোনোভাবেই উড়ে যাওয়ার সময়টুকু পাবে না মশা। বসার দু-তিন সেকেন্ডের মধ্যেই মৃত্যু হবে মশার।
ভারত সরকারের ডাইরেক্টরেট অফ ন্যাশনাল ‘ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগাম’ অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই পদক্ষেপ অনুযায়ী এই মশারির ব্যবস্থা করেছে রাজ্য। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের উপদেষ্টা তপনকুমার মুখোপাধ্যায় জানান, শহরের অনেক বাসিন্দা মশারি না টাঙিয়ে ঘুমোন। আবার মশারির পরিবর্তে কেউ কেউ কীটনাশক তরল জ্বালিয়ে ঘুমাচ্ছেন, যা শরীর এবং পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক। কিন্তু, ডেল্টামেথ্রিন মেশানো এই মশারি ম্যালেরিয়া থেকে একশো শতাংশ নিরাপত্তা দেবে বলেও তিনি জানান।