পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: খড়গপুর আইআইটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়জান আহমেদের রহস্যমৃত্যু মামলায় হাইকোর্টে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল আইআইটি ডাইরেক্টরের। কিন্তু তিনি সেদিন আসেননি। মৃত্যু নিয়ে আইআইটির পেশ করা রিপোর্টে সন্তুষ্ট হয়নি হাইকোর্ট। হাইকোর্ট শুনানিতে ডাইরেক্টরকে জিজ্ঞেস করে এই দায়সারা রিপোর্ট কেন? আপনার ক’জন সন্তান রয়েছে? তাদের সঙ্গে এরকম হলে কি করতেন? আপনি আদালতে আসায় গুরুত্ব না দিয়ে টোকিও সফরে গেলেন?
ডাইরেক্টর জানান, হ্যাঁ স্যার, আমার দুই পুত্র রয়েছে। তবে আমি সব ছাত্র-ছাত্রীকে নিজেদের সন্তান মনে করি। আমি তদন্ত রিপোট নতুন করে পেশ করছি। এরপর আর কোনও ভুল হবে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই মামলায় হাইকোর্টে র্যাগিং প্রসঙ্গ টেনে এনে বিচারপতি মান্থার বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে র্যাগিং হলে সঙ্গে সঙ্গেই হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করে তদন্ত শুরু করা। র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেছিলেন ফয়জান। আর তারপর তার মৃত্যু হল। পুলিশকেও আদালত বলে, এই মামলায় কোনও শিথিলতা দেখতে চাই না। অনুগ্রহ করে কোনও পক্ষ নেবেন না। এমন তদন্ত করুন যাতে এই প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং করার সাহস কেউ না পায়। হাইকোর্টে এ দিনের মামলায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ফয়জান র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন। যদিও তার রহস্যমৃত্যুর পর্দা ফাঁস করতে পারেনি পুলিশ।
প্রথমে পুলিশ ও কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্ট চেপে ধরায় ক্রমশই ভেঙে পড়ছে আইআইটি কর্তৃপক্ষ। ফয়জানের বাবা-মা হাইকোর্টে যে অভিযোগ জানিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে হত্যা করা হয়েছে তাদের পুত্রকে। একদল সিনিয়র ছাত্র ফয়জানকে তাদের অনুষ্ঠানে যেতে বলেছিল কিন্তু সে রাজি হয়নি। তারপর তাকে হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি হোস্টেল বদল করতে হয়। সেই অভিযোগ করেছিল ফয়জান। আইআইটি কর্তৃপক্ষ সেসময় ব্যবস্থা নিলে ফয়জানের মৃত্যু হয়তো হত না বলে মনে করে তার পরিবার। হাইকোর্টে তাঁরা জানিয়েছেন, ফয়জানকে হত্যা করা হয়েছে অত্যন্ত সুনিপুণ পরিকল্পনা করে।
পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ৬ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন তদন্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখবে আদালত। আর আইআইটি প্রশাসনের ভূমিকা ও গাফিলতির বিষয়ে শুনানি হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি। উল্লেখ্য, অসম থেকে পড়তে আসা ফয়জানের পচা গলা লাশ হোস্টেল রুম থেকে উদ্ধার হয় ১৪ অক্টোবর। অসমের মুখ্যমন্ত্রী এই মামলার সঠিক তদন্ত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্য সরকারের কাছে।