আবদুল ওদুদ
প্রায় সাড়ে তিনমাস আগে মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘী থানার মথুরাপুর থেকে কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজে যান অসিকুল ইসলাম নামে ৩২ বছবেরû এক যুবক। মুর্শিদাবাদ জেলার অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া এলাকা এই মথুরাপুর। এলাকার অনেকেই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আর এই রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে কেরলে অসিকুল ইসলাম গত ২৮ জুন থেকে হঠাৎ নিখোঁজ। নিখোঁজ অসিকুলের ভাই মোমিন জানান– তাদের বেশ কয়েকটি সাইডে কাজ চলছে। অসিকুল তিনজনকে নিয়ে কেরলের কান্নুর জেলার ইরিক্কুর থানার কুত্তব জংশন এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন পরেশ মন্ডল ও গনেশ মন্ডল। গত ২৮ জুন কাজ চলাকালীন আনুমানিক û দুপুর ২ নাগাদ অন্যান্যদের বলে যায় মোবাইলের দোকানে ফোন দেওয়া আছে। সেটি আনতে যাচ্ছি। কাজের জায়গা থেকে মোবাইলের দোকানের দুরত্ব মাত্র ২০০ মিটার। এরই মধ্যে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের ভাই মোমিন জানান– কাজের সাইড থেকে মোবাইলের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সে আদৌ ফোনের দোকানে যাযনি। ফোনটি মোবাইলের দোকানেই রয়েছে। এর পরই এলাকা চাঞ্চল্য ছড়ায়। অনেক খোঁজাখুঁজির হয় কিন্তু কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি নিখোঁজ অসিকুল ইসলামের। এর পর ২৯ জুন মোমিন স্থানীয় থানা ইরিক্করে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। চারদিন হয়ে গেল অসিকুলের কোন সন্ধান দিতে পারেনি স্থানীয় থানার পুলিশ। দিনে ২ বার করে থানায় গিয়ে খবর নেন মোমিন। কোন সন্ধান পাওয়া গেছে কিনা। কিন্তু প্রতিবারই থানা থেকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে নিখোঁজ অসিকুলের ভাই মোমিনকে। মোমিন স্থানীয় থানায় দাবী জানান– রাস্তায় সিসি ক্যামেরা রয়েছে। পুলিশ ইচ্ছে করলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সন্ধান করতে পারে। কিন্তু পুলিশ সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পরীক্ষা করলেও দেখা যায় একরাব অসিকুলকে দেখা গেছে। কিন্তু তারপরের ফুটেজে আর কিছু দেখা যায়নি।
মোমিন জানায় স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি খবরও প্রকাশিত হয়েছে। তবে অসিকুল ইসলামের সঙ্গে আরও দুইজন যে সঙ্গী ছিল পরেশ মণ্ডল ও গনেশ মণ্ডল গত বৃহস্পতিবার সকালে চা খেতে যাওয়ার নাম করে পালিয়ে যায়। মোমিন আশঙ্কা করছেন তারা হয়ত ট্রেন ধরে মুর্শিদাবাদ পালিয়ে আসছে। তাদের গতিবিধির জন্যও পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে– ছেলে নিখোঁজ হওয়ায় মথুরাপুর গ্রামে নেমে এসেছে আতঙ্কের ছায়া। অসিকুলের পিতা নজরুল ইসলাম– স্থানীয় বিধায়ক সুব্রত সাহা থেকে শুরু করে সাংসদ খলিলুর রহমান-র কাছও ছুটে গেছেন। নিখোঁজ অসিকুলের স্ত্রী সহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে বাড়িতে রয়েছে। অসিকুলেরা তিন ভাই দুইজন কেরালায় থাকলেও একজন মেদিনীপুরে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।
নিখোঁজের পিতা নজরুল ইসলাম ছেলেকে উদ্ধারের জন্য অনেকের কাছে ছুটে চলেছেন– যাতে যে কোনভাবে প্রশাসনের সহযোগিতায় নিখোঁজ অসিকুল ইসলামকে ফিরে পাওয়া যায়। শুক্রবার বিকেলে জঙ্গীপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান-এর বাড়িতে নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পেতে হাজির হন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নজরুল ইসলাম। সন্ধান করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন সাংসদ।
নিখোঁজের পরিবার সাংসদ খলিলুর রহমানকে বলেন– বিষয়টি মু্খ্যমন্ত্রীর গোচরে আনার। মু্খ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ নিলে হয়তো অসিকুলকে ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে। সাংসদ খলিলুর রহমান নিখোঁজের পরিবারকে আশ্বাস দিয়ে বলেন। আমি বিষয়টি জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে জানাব। জেলাশাসক রাজ্য সরকারের নজরে আনবেন বিষয়টি। এছাড়াও তিনি বলেন– কান্নুর জেলাশাসককে চিঠি করব সাংসদ হিসেবে। যাতে নিখোঁজ অসিকুলকে দ্রুত পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।