পারিজাত মোল্লা: ফের সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে রাজ্য প্রশাসন কে ভৎসনা করলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার।বৃহস্পতিবার এক মামলার শুনানিতে বড়সড় প্রশ্ন তুলেছেন খোদ বিচারপতি। পুলিশ নিয়োগ না করাটাই সমস্যা বলে তিনি জানিয়েছেন মামলার শুনানি পর্বে। সরশুনা থানা এলাকার এক ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়াররা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি নিখোঁজ বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের।
এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার। সেই মামলার শুনানিতে রাজ্য প্রশাসনে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে তাত্পর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার।পুলিশ নিয়োগ না হওয়ার ফলে এক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ওপরে ভরসা করতে হচ্ছে।” প্রসঙ্গত,২১ মার্চ, গত শুনানিতে ঠিক এই মামলাতেই রাজ্যের আইজি-কে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে গাইডলাইন তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন মান্থার। হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য সিভিক ভলান্টিয়ারদের কোন কোন কাজে ব্যবহার করা হয়, সেই ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য ।
আদালতে এদিন এই বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়। তার প্রেক্ষিতেই রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা প্রসঙ্গে বিচারপতি মান্থার বলেন, “সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে কাজ চলছে। কনস্টেবল, এএসআই নিয়োগ যতদিন না হবে, ততদিন তাঁদের দিয়েই কাজ চলবে।” এক্ষেত্রে আনিস খানের প্রসঙ্গও টেনে আনেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা চলছে, দুর্ভাগ্যের বিষয় আনিস খানের ঘটনাতেও দু’জন সিভিক সেই রাতে ওই বাড়িতে গিয়েছিল।”
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘পুলিশের নিয়োগের ব্যাপারে যতদিন না উদ্যোগ হবে, ততদিন এই এক বছরের চুক্তি ভিত্তিক লোকেদের দিয়েই নীচু তলায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা হবে’।সম্প্রতি সরশুনা থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, এক যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরিবারের দাবি, তারপর থেকে আর ওই যুবকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে আদালতের দ্বারস্থ হন যুবকের পরিবার। সেখানে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে বাড়িতে ঢুকে ওই ব্যাক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে।
পরিবারের দাবি, একাধিকবার ছেলের খোঁজের জন্য গেলেও সরশুনা থানার পক্ষ থেকে সেভাবে কোনও সদুত্তর মেলেনি। এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হয় পরিবার।প্রসঙ্গত, গত বছর আমতার ছাত্র নেতা আনিস খানের রহস্যমৃত্যু রাজ্যকে তোলপাড় করেছিল। পরিবারের অভিযোগ ছিল, রাতে পুলিশের পোশাকে বাড়িতে ঢুকেছিল কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে সিভিক ভলান্টিয়ারও ছিলেন। ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ও আদালতে স্বীকার করে নিয়েছিলেন আনিস কাণ্ডে পুলিশি গাফিলতির কথা। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের সিঙ্গেল বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ,-‘ পুলিশে নিয়োগ না করাই রাজ্যের আসল সমস্যা । কনস্টেবল, এএসআই, এসআই পদে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হচ্ছে না । এর বদলে একবছরের চুক্তির ভিত্তিতে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হচ্ছে । থানাগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশকর্মী না থাকায় আধিকারিকদেরও এইসব চুক্তিভিত্তিক সিভিক ভলান্টিয়ারদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে । এরফলে নিচুতলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না’ ।